মধ্যবিত্তের আবাসনে সম্ভাবনা দেখছে বিশ্ব ব্যাংক

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির এই সময়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন খাত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2016, 06:52 PM
Updated : 29 Nov 2016, 06:52 PM

গ্রাম ও শহরাঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের এই খাতকে শৃঙ্খলায় রাখতে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সুপারিশও করেছে আন্তর্জাতিক এই উন্নয়ন সহযোগী।

তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আবাসন খাত ‘খুবই বর্ধনশীল’। শুধু ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবাসন খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

২০২০ সালের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আবাসন খাতের বাজার ৮১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।

“ফলে ২০২০ সালের মধ্যে এই খাতে মোট চাহিদা ১৬৭ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট অনন্যা ওয়াহিদ কাদের মঙ্গলবার জানান, ‘সেকেন্ডারি’ বিভিন্ন উৎস থেকে নেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা করেছেন তারা। এখানে গ্রামীণ অঞ্চলে প্রতি মাসে ৩৪ হাজার টাকার নিচে এবং শহরাঞ্চলে মাসে ৬০ হাজার টাকার নিচের উপার্জনকারীকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ অঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সমাজের আবাসন খাতে অর্থায়ন বা বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর জন্য একটি লোভনীয় সুযোগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ ২০২০ সালের সামগ্রিক চাহিদার মধ্যে ৩৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে গ্রামীণ অঞ্চলের আবাসন নির্মাণের জন্য। অর্থাৎ মোট চাহিদার ৪১ শতাংশ আসছে গ্রামীণ জনপদ থেকে।

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর বাইরে এই খাতের বিনিয়োগ করতে গেলে ব্যাংকগুলো কিছু নীতিগত সমস্যার মুখে পড়ে জানিয়ে তা সমাধানে নীতিনির্ধারণী সংস্থাগুলোকে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

“ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শহুরে গ্রাহকদের হাউজিং ঋণ চাহিদা পূরণে বেশি মনযোগী হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে এই খাতের বিশাল বাজার দৃষ্টির বাইরে থেকে গেছে,” বলা হয়েছে এতে।

প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্য আয়ের গ্রাহকদের হাউজিং ঋণ ব্যবস্থাপনায় লগ্নি প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের সুবিধায় কিছু সুপারিশ করা হয়।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

মর্টগেজ আইন

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের কয়েকটি বড় শহর ছাড়া অন্যান্য গ্রামীণ অঞ্চলের মর্টগেজ আইন পরিষ্কার নয়। এছাড়া অর্থঋণ আদালতে মর্টগেজ আইনের প্রয়োগ করে ফল পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই বিষয়টি অচিরেই পরিষ্কার করতে হবে।

ঋণে বাধা দূর

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর তুলনায় তফসিলি ব্যাংকগুলো হোম লোনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম নীতিগত বাধা বিপত্তির মধ্যে রয়েছে। হাউজ লোনের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ দক্ষতা থাকলেও বাজারের অধিকাংশই এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। মোট বিনিয়োগের ১০ ভাগের বেশি গৃহায়নে দেওয়া যাবে না এমন একটি বিধি নিষেধও বর্তমানে চালু রয়েছে যা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।

ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি

আবাসন খাতের ঋণ আরও দীর্ঘমেয়াদি করা প্রয়োজন। স্বল্প মেয়াদে এই ঋণ বিতরণের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবতার আলোকে ঋণের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

পিপিপি চালু

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবাসন প্রকল্পের জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চালু করা প্রয়োজন। ব্যক্তি মালিকানাধীন পতিত জমি অধিগ্রহণ করেও হাউজিং প্রজেক্ট চালু করা যায়।