গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে ভারতের মতো বাংলাদেশেও ১০০ কোটি ডলারের এই ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছিল আইএফসি।
বৈঠক চলাকালেই আইএফসির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
পরে ওই বছরের অক্টোবরে পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সম্মেলনে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএফসির কাছে আনুষ্ঠানিক ‘সম্মতিপত্র’ দেওয়া হয়।
কিন্তু এক বছর পর গত ৭ থেকে ৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের এবারের বার্ষিক সম্মেলনে আইএফসি ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানায়।
“আমরাও এখন আর তেমন আগ্রহী নই। আমাদের রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সেটাকে কীভাবে বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়- তা নিয়েই এখন আমরা বেশি ভাবছি।”
সম্মেলনে যোগ দেওয়া অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএফসি আসলে ফান্ড রেইজ করতে পারেনি। সে কারণেই তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।”
প্রবাসীদের জন্য ‘ডলার বন্ড’ থাকলেও প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
আইএফসি তাদের প্রস্তাবে বলেছিল, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করে তা স্থানীয় মুদ্রা টাকায় বাজারে ছাড়তে চায় তারা।
‘টাকা বন্ড প্রবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় হবে’ উল্লেখ করে সে সময় আইএফসির প্রস্তাবে বলা হয়, বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে কোনো সুদ (জিরো ইন্টারেস্ট) পাওয়া যায় না। টাকা বন্ডে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মতো সুদ থাকবে।
“বাংলাদেশের প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় কোনো ব্যাংকে না রেখে টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করলে ‘ভালো’ মুনাফা পাবেন। প্রবাসীরা ছাড়াও যে কেউ এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।”
‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটও জনপ্রিয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিল আইএফসি।
তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, “এটি হবে নিরাপদ বিনিয়োগ। বাংলাদেশে অনেকের সঞ্চয় আছে; তারা কিনবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা কিনবেন। বিনিময়ে তারা সুদ পাবেন।”
‘টাকা বন্ড’ ছাড়া হলে বাংলাদেশ সরকার ও আইএফসি- উভয় পক্ষই লাভবান হবে বলে সে সময় আইএফসি দাবি করেছিল।
মূলত দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আইএফসির ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হয়েছিল বলে জানান মুহিত।
“এখন যেহেতু তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরাও ভাবছি না…। বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছি।”
আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের এবারের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেয়।