বিশ্ব ব‌্যাংকের ‘উৎসাহ’ পেল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা 

বিশ্ব ব‌্যাংকের মত সংস্থার কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনের ‘প্রশংসা’ লক্ষ‌্য অর্জনের চেষ্টাকে আরও ‘বেগবান করবে’ বলে মন্তব‌্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2016, 11:04 AM
Updated : 17 Oct 2016, 01:51 PM

দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে সোমবার বিশ্ব ব‌্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা গত ৪৫ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি আর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ‌্য পূরণের অঙ্গীকার ভুলে যাবে না বলে আশা প্রকাশ করেন। 

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ‌্যে মধ‌্যম আয়ের একটি দেশে পরিণত হবে বলে নিজের বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী; এর প্রতিধ্বনী পাওয়া যায় বিশ্ব ব‌্যাংক কর্মকর্তাদের বক্তব‌্যেও। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রত‌্যয় আবারও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।  

রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিশ্ব ব‌্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তথ‌্যচিত্র দেখানো হয়।

বিশ্ব ব‌্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, মাত্র এক বছরের মধ‌্যে পৃথিবীতে ১০ কোটি মানুষকে অতিদারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘চমৎকার’ হিসেবে বর্ণনা করে কিম বলেন, এই অভিজ্ঞতা অন‌্য দেশের মধ‌্যেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। 

এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নারী স্বাস্থ‌্যকর্মীদের দল গড়ে তুলে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার মত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার কথা স্মরণ করেন কিম, যিনি নিজে একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।   

তিনি বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনের জন‌্য উদ্ভাবনী ধারণা প্রবর্তন যে জরুরি, তা বাংলাদেশ খুব দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে।”

বিশ্ব ব‌্যাংক প্রধান বলেন, জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করা ঠিক ততটাই জরুরি, যতটা জরুরি অবকাঠামো ক্ষেত্রের বিনিয়োগ।

“অনেক চ‌্যালেঞ্জের মধ‌্যেও সেই বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে,” বলেন তিনি।

এ অনুষ্ঠানে আসার আগে সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সঙ্গে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তার পরিমাণ ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেন কিম।  

মানবজাতিকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে বহু বছর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব‌্যে বলেন, বাংলাদেশ সেই পথে বহুদূর অগ্রসর হয়েছে; ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার নিয়ে স্বাধীন হওয়ার পর তা নামিয়ে এনেছে ২০ দশমিক ৬ শতাংশে।  

মুহিত এই অভিযাত্রা অব‌্যাহত রাখতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন এবং ২০৩০ সালের মধ‌্যে টেকসই উন্নয়নের প্রতিটি লক্ষ‌্য পূরণের প্রত‌্যয়ের কথা জানান।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পল রোমার অনুষ্ঠানে বলেন, এমনিতে অর্থনীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ‘খুব বেশি জরুরি না হলেও’ বাংলাদেশের মত দেশের পরিস্থিতি তেমন নয়।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে রোমার শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেন, মান বজায় রাখাই আসল।

সমাজে সাম‌্য প্রতিষ্ঠার মধ‌্য দিয়েই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ওপর জোর দেন তিনি; বলেন, এর কোনো বিকল্প নেই।

দারিদ্র্য বিমোচনে দ্রুত উদ‌্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে রোমার বলেন, এক্ষেত্রে সামান‌্য বিলম্বও অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।    

বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ‌্য বাস্তবায়নে সাফল‌্যের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।  

অনুষ্ঠান শেষে ধন‌্যবাদজ্ঞাপন করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ‌্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন।