প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আরেক ধাপ অগ্রগতি বাংলাদেশের

বিশ্বে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে এনেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2016, 07:46 AM
Updated : 28 Sept 2016, 02:06 PM

তাদের ‘গ্লোবাল কমপেটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৬-১৭’ বলছে, এবার ১৩৮টি দেশের মধ‌্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৬তম অবস্থানে। আগের বছর দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ ১০৭ এ পৌঁছেছিল।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বুধবার বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম, যেটি দাভোস ফোরাম নামে পরিচিত, ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে। সিপিডি বৈশ্বিক এই ফোরামের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত সময়ে চালানো জরিপের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ১০০ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন এই জরিপে, যাদের ব্যবসা বৈশ্বিক বাণিজ্য বা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

একটি দেশের অবস্থান বিচার করার জন‌্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ‌্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্য বাজারে দক্ষতা, শ্রম বাজারে দক্ষতা, আর্থিক খাতের উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বাজারের আকার; বাজারের সংবেদনশীলতা এবং নতুনত্ব- এই ১২টি সূচক বিবেচনা করা হয়েছে।   

সক্ষমতা সূচকে এক ধাপ অগ্রগতি হলেও সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে গতবছরের মতই, ৩ দশমিক ৮। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩ দশকি ৬; আর ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৭।

এবারের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বাজারের সংবেদনশীলতা ও নতুনত্ব সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হলেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, শ্রম বাজারে দক্ষতা, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও বাজারের আকারে স্কোর কমেছে। আর স্বাস্থ‌্য ও প্রাথমিক শিক্ষা এবং পণ্য বাজারের দক্ষতা সূচকে স্কোর হয়েছে গতবারের সমান। 

অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্নীতি, ব‌্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ ও দক্ষ কর্মীর অভাবকেই বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ব‌্যবসায়ীরা। 

গতবারের মত এবারও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সূচকে শীর্ষস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, তাদের স্কোর ৫ দশমিক ৮। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, জাপান, হংকং ও ফিনল্যান্ড।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ‌্যে ভারত সূচকের ৫৫তম অবস্থান থেকে এগিয়ে ৩৯, নেপাল ১০০ থেকে ৯৮, ভুটান ১০৫ থেকে ৯৭, পাকিস্তান ১২৬ থেকে ১২২ নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে। কেবল শ্রীলংকা ৬৮ থেকে পিছিয়ে গেছে ৭১ নম্বর অবস্থানে।

প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “সূচকে বাংলাদেশের  উন্নতি হয়েছে মূলত ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনীতি, সুশাসন ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতির কারণে।”

আর্থিক খাতের দক্ষতা, সুশাসন, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে অগ্রগতির জন্য সরকারকে বিশেষ নজর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

“কিছু কিছু সূচকে ভাল করলেও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার জন্য অর্থনীতির যে সম্ভবনা রয়েছে তার জন্য তুলনামূলকভাবে অগ্রগতি হয়নি,” বলেন মোয়াজ্জেম।

একই অনুষ্ঠানে সিপিডি ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ-২০১৬’ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্ব প্রতিযোগিতা সূচকের জরিপের প্রশ্নের উত্তর থেকেই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুত পরিস্থিতি ইতিবাচক হলেও সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, যাতে একটি কার্যকর র যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ ব‌্যবসায়ী বলেছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তবে আর্থিক খাতের দক্ষতা ও উৎকর্ষতায় অবনতি ঘটছে।

দেশে প্রচুর শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট তৈরি হলেও তারা দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে না এবং উদ্ভাবনী চিন্তার অভাব থাকায় তাদের চাকরির বাজারে প্রবেশে জটিলতা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সংকীর্ণ আর্থিক সুবিধা, উচ্চ কর হার, শিক্ষিত শ্রম শক্তির অভাব, কর নীতির জটিলতা, অপরাধ ও শ্রমশক্তির দুর্বল নৈতিকতাবোধ এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত করেছেন।

জরিপে উত্তরদাতা ব্যবসায়ীদের ৬০ শতাংশ মনে করছেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলনীয় বিচারে এগিয়ে যাচ্ছে না, প্রতিযোগীতা সক্ষমতার ক্ষেত্রে বিশ্বে নিজের অবস্থান তৈরি করতে আরও অগ্রসর হতে হবে।”

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ‌্যাসোসিয়েট কিশোর কুমার বাসকসহ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।