ভুট্টা জনপ্রিয় করতে উদ্যোগের প্রত‌্যাশা

বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভুট্টাকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান এসেছে একটি কর্মশলায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 01:21 PM
Updated : 25 Sept 2016, 01:21 PM

বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ভুট্টা মানিকগঞ্জের সিংগাইরে খোলা চাতালে শুকাতে ব্যস্ত এক শ্রমিক । ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

রোববার ‍রাজধানীতে ভুট্টার বাজারজাতকরণ নিয়ে ওই কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, “ধান ও গমের চেয়ে ভুট্টার খাদ্যমান হয়তো কম, কিন্তু ভুট্টা মানুষের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনো কোনো আটার সঙ্গে ৩০ শতাংশ ভুট্টা ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু আটার সঙ্গে এর যে ব্যবহার হলো, সেটা বলা হচ্ছে না।”

বাংলাদেশে গোখাদ্য, পশু ও মুরগীর খাদ্য হিসাবে ভুট্টার স্বীকৃতি থাকলেও মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসছে না মন্তব‌্য করে তিনি বলেন, “ভুট্টাকে মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য সেটাকে উপলব্ধির জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। ভুট্টা দিয়ে মানুষের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া মানুষকে জানানো দরকার।”

মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অক্সফামের ওই কর্মশালায় তৃণমূলের ভুট্টা চাষীদের পাশাপাশি ব্র্যাক, এসিআই, কৃষিবিদ গ্রুপ, কাজী গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

ভুট্টার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ, সংরক্ষণাগার নির্মাণ, চাতালের ব্যবস্থা, কৃষকদের ঋণ দেওয়া এবং বর্তমানে আমদানিনির্ভর ভুট্টার বীজ উৎপাদন নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণার সুপারিশ করেন আলোচকরা।

যে কোনো বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো সুপারিশ জানানোর ক্ষেত্রে এনজিওগুলোকে নিজেদের মধ‌্যে সমন্বয় করে সম্মিলিতভাবে যাওয়ার পরামর্শ দেন মকবুল হোসেন।

তিনি বলেন, “এখানে একেক এনজিও থেকে একেক রকম সুপারিশ এসেছে। আপনাদের সমন্বয়টা আগে করা দরকার। যে কোনো বিষয়ে নিজেদের সমন্বয় করে সরকারের কাছে উপদেশ বা সুপারিশ পাঠালে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের জন্য সহজ হয়।”

ভুট্টার বীজ আনার ক্ষেত্রে শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা না করে জনস্বার্থে ভাল বীজ আনতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমদানীকারকদের প্রতি আহ্বান জানান সংসদীয় কমিটি সভাপতি।

ভুট্টা বাংলাদেশের কৃষকদের মধ‌্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে মন্তব্য করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, গতবছর ৪ লাখ হেক্টর জমিতে ২৫ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। আগামী এক দশকে এই পরিমাণ ১ কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করলেও সেভাবে উৎপাদনে আনা যায়নি। বীজের জন্য আমদানিনির্ভরতা ও এই শষ‌্যকে খাদ্য প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে না পারাকে এর কারণে হিসেবে চিহ্নিত করেন হামিদুর।

ভুট্টা বীজের আমদানিনির্ভরতা কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হলেও বীজের জন্য আমরা আমদানিনির্ভর হয়ে আছি। সেটা দূর করতে পারলে আমরা উৎপাদন আরও অনেকগুণ বাড়াতে পারব।”

কর্মশালার ধারণাপত্র উপস্থাপন করে অক্সফামের ‘লাইভলিহুড অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর’ সমন্বয়ক আনিস আর চৌধুরী বলেন, যে কোনো খাদ্যে কী পরিমাণ ভুট্টার ব্যবহার হচ্ছে তা প্রকাশ করা দরকার। তাহলে ভুট্টার একটি ‘প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি’ দাঁড়াবে।

“দাম নির্দিষ্ট করে দিয়ে খাদ্যে ব্যবহারের প্রক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ালে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব।”

অন্যদের মধ্যে ‘গণসচেতনা’ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ইরা রহমান, কৃষিবিদ সিড লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল আকতার, লালতীর লাইভস্টক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক, ব্র্যাকের সিড অ্যান্ড অ‌্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজ কর্মসূচির প্রধান সুধীর চন্দ্র নাথ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।