কাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক, অর্থাৎ কাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতেই হবে- তা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে।
২০১৬-১৭ করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ঠিক হয়েছে ৩০ নভেম্বর। ওই দিনটি পালিত হবে কর দিবস বা ‘ট্যাক্স ডে’ হিসেবে।
এর আগে প্রতি বছরই রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হলেও এবার তা আর করা হবে না বলে সতর্ক করেছে এনবিআর।
>> যাদের আয় করমুক্ত আয়সীমার মধ্যে নয়, তাদের সবাইকে হিসাব দিতে হবে।
>> মাসিক মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে করদাতা সনাক্তকারী নম্বর (টিআইএন) থাকা এবং বার্ষিক আয়কর বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক।
>> আগের তিন বছরের আয় করযোগ্য হয়ে থাকলে এবারও রিটার্ন দিতে হবে।
>> যাদের ব্যবসা বা পেশা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তাদেরও বিবরণী দাখিল করতে হবে।
>> সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক
>> এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত সব এনজিওকে তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে।
>> ডাক্তার, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, আয়কর আইনজীবী, চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থাপতি, সার্ভেয়ার অথবা এ ধরনের পেশায় নিয়োজিত সকল ব্যক্তিকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
>> চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অথবা ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সব সদস্যের আয়কর বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক।
>> সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বিভাগীয় শহর অথবা জেলা শহরে বসবাসকারী কেউ গাড়ির মালিক হলে অথবা মূল্য সংযোগ কর আইনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্য হলে তাকেও রিটার্ন দিতে হবে।
>> পৌরসভা, সিটি করপোরেশন অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল প্রার্থীকে তাদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হবে।
কার জন্য কত কর
# বর্তমান নিয়মে কোনো করদাতার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হয়। আর নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। করদাতা প্রতিবন্ধী হলে তাকে পৌনে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।
# গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা সোয়া চার লাখ টাকা। এ ছাড়া সন্তান প্রতিবন্ধী হলে পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবক করদাতা হলে বার্ষিক আয়ে আরও ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত সুবিধা পাবেন।
# করমুক্ত সীমার বেশি আয় হলে বিভিন্ন হারে কর দিতে হবে। করমুক্ত আয়সীমার পর প্রথম ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে; পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ; পরবর্তী ৬ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ; পরবর্তী ৩০ লাখ টাকার জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
# এ ছাড়া কোনো ব্যক্তির মোট আয় যদি সাড়ে ৪৭ লাখ টাকার বেশি হয়; তবে বাকি টাকার জন্য ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে।
# ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্য সিটি এলাকার জন্য ৪ হাজার টাকা। আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। শেষ পর্যন্ত বছর শেষে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল বলে এনবিআরের তথ্য।