যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো শহরে এপিজি’র ১৯তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের তৃতীয় পর্বের মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঠেকাতে বিশ্ব মানদণ্ডে বাংলাদেশের ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্তির ঝুঁকি কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সান ডিয়েগোতে এপিজি’র সভায় বাংলাদেশের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহবুবে আলম।
তিনি বৃহস্পতিবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত দলের গত এক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই সাফল্য। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে বিশ্ব মানদণ্ডে বাংলাদেশের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঝুঁকি কেটে গেল।”
এই সম্মেলন গত ২২ জুলাই ঢাকায় হওয়ার কথা থাকলেও গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার কারণ দেখিয়ে তা সান ডিয়াগোতে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র, আইন, অর্থ মন্ত্রালয়, এনবিআর, দুদক, পুলিশ ও বিএফআইইউ’র প্রতিনিধি রয়েছেন।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স ও মরণাস্ত্র বিস্তারে অর্থায়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ ভালো রেটিং পেলেও অন্য আরও কয়েকটিতে উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় এই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
“এপিজির সভায় আরও দুটো ক্ষেত্রে (আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন) এই মূল্যায়ন উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশ এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়েছে।”
“এছাড়া কয়েকটি সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক চারটি ইমিডিয়েট আউটকামের রেটিং কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছিল তা সভায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
“এর ফলে চূড়ান্ত রিপোর্টে বাংলাদেশের রেটিং নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা হতে ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ হতেও ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূলকরণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে।”
বাংলাদেশের উপর প্রথম ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এ মূল্যায়ন শুরু করে, যা ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম-এফএসএপি নামে পরিচিত।
ওই সময় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে কার্যক্রম কেবলমাত্র শুরু হওয়ায় বেশিরভাগক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নন-কমপ্লায়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মূল্যায়ন হয় এপিজির মাধ্যমে।
এপিজির ওই প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ফলাফল ভালো না হওয়ায় ২০১০ সালে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে এফএটিএফ আইসিআরজি (ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপ) প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ওই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল রিভিউ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার নির্দেশক একটি পত্র এফএটিএফ-এর প্রেসিডেন্টকে পাঠান।
ওই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইনসহ বিভিন্ন বিধি-বিধান, প্রজ্ঞাপন, গাইডলাইন প্রণয়ন করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সংস্কার করে।
এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ আইসিআরজি প্রক্রিয়া হতে বেরিয়ে আসে।
এপিজি’র তৃতীয় পর্বের মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়াটি ২০১৪ সালে শুরু হয়, যাতে বাংলাদেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কার্যকারিতার মূল্যায়ন হয়।