রেমিটেন্সে নিম্নগতি

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন‌্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্স অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৫ শতাংশ কমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2016, 07:15 PM
Updated : 5 Sept 2016, 07:15 PM

এই ধারা অব‌্যাহত থাকলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের তথ‌্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

গত অগাস্টে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এই অংক গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা ১ শতাংশ কম। গত বছরের অগাস্টে১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।

তবে জুলাই মাসের চেয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স বেড়েছে।জুলাইয়ে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ২৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।আর চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এই দুই মাসে এসেছে ২১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, রেমিটেন্সের এই নেতিবাচক ধারা আগামী মাসগুগুলোতেও অব্যাহত থাকলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও ‘নেতিবাচক’প্রভাব পড়তে পারে; যদিও দুই মাসের হিসাবে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মনে করছেন তিনি। 

বিআইডিএসের এই গবেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই মাসের তথ্যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অর্থবছরের প্রথম মাস ছিল রোজার ঈদের পরের মাস। প্রতিবারই ঈদের পরের মাসে কম রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা।

“কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন যে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন সেটা যোগ হবে সেপ্টেম্বর মাসের হিসাবে।”

অবৈধ পথে (হুন্ডি) প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতনে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব‌্যাংকের চেয়ারম‌্যান জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, অগাস্টে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ কোটি ১১ লাখ এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

তবে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।এ ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার।

এছাড়াসোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ডাচ্‌-বাংলা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছিল।

গত অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।তার আগের অর্থবছরে (২০১৪-১৫) এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।

রেমিটেন্স কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেশ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আমদানি ব্যয় কম এবং বিদেশি ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধির কারণে (ফরেন এইড) রিজার্ভ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।