‘দূর হওয়ার পথে’ শহরের অতিদারিদ্র্য

সরকারি-বেসরকরি নানা উদ্যোগের ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ২৩ শতাংশ থেকে কমে পাঁচে নেমে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 11:10 AM
Updated : 30 August 2016, 05:19 PM

বেসরকারি সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) ‘সিঁড়ি’ প্রকল্পের আওতায় একটি গৃহস্থালি জরিপে উঠে এসেছে এই চিত্র।

রোববার জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন বলেন, “শহরে দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালে ৪৩ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালে তা ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। আর এখন অতিদরিদ্র রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ; যা ১৯৯১ সালে ২৩ শতাংশ ছিল।”

জাতিসংঘের হিসাবে এই অঙ্কটি তিন শতাংশে পৌঁছলে শহরে অতিদারিদ্র্য ‘শূন্যের কোঠায়’ বলে ধরে নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বলা যায় এই হারটি শূন্যের কোঠার কাছাকাছি। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে এই অতিদারিদ্র্যের অবসান ঘটনো সম্ভব।” 

‘সিঁড়ি’ প্রকল্পের সমাপ্তি উপলক্ষেই জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হচ্ছে।

জরিপের মেয়াদকালে গত প্রায় আট বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার বস্তিবাসীকে প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিকসেবাসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের প্রভাব দেখতে ২০১১ সালে একটি জরিপ চালান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন। চার বছর পর প্রকল্প মেয়াদের শেষের দিকে আরেকটি জরিপ করা হয় তার নেতৃত্বে।

ঢাকার মিরপুর, কড়াইল, কামরাঙ্গীরচর, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বস্তিবাসীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানান ডিএসকের সহ-সভাপতি আয়েশা খানম। 

বিনায়ক সেনের মতে, সাময়িকভাবে দারিদ্র্য দূর করলে তা অগ্নিকাণ্ড, উচ্ছেদ, দুর্যোগ বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবার ফিরে আসতে পারে। এর সঠিক সমাধান বা স্থায়িত্ব নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।

“দারিদ্র্যের একটি সূচক হচ্ছে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ক্যালরির উপস্থিতি। কিন্তু জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আরও অনেক মৌলিক চাহিদা থাকে, যার প্রাপ্তি অত্যন্ত প্রয়োজন।”

‘সিঁড়ি’ প্রকল্পে দৃশ্যমান সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১১ সালে মধ্য পর্যায়ের জরিপেই দেখা গেছে, সাধারণ দরিদ্র মানুষের তুলনায় প্রকল্পের আওতায় থাকা দরিদ্র মানুষের কনজাম্পশন (ভোক্তা চাহিদা) ক্ষমতা ৪৭ শতাংশ বেশি ছিল। চার বছর পরের জরিপে সেই প্রবণতা আরও ইতিবাচক হয়েছে।

পাশাপাশি প্রকল্পের কিছু ব্যর্থতা তুলে ধরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “আবাসন ব্যবস্থায় কোনো উন্নতি পাইনি। গৃহস্থালির পণ্যে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাসস্থানের উন্নতি না হলে সার্বিক উন্নতি বলা যায় না।”

তিনি বলেন, দরিদ্র সমাজে মজুরি বেড়ে মানুষের অবস্থার যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি বাড়তি মজুরির কারণে ছেলে শিশুদের স্কুল ছাড়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।

“তারা দৈনিক তিন-চারশ টাকার জন্য স্কুল ত্যাগ করতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় রকমের অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে। এজন্য বস্তি এলাকায় উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চালু থাকা দরকার।”