স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরছে নিউ ইয়র্ক ফেড-বাংলাদেশ ব্যাংক

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ার পর লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা তুলে নিতে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক একমত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2016, 11:00 AM
Updated : 19 August 2016, 05:39 AM

কবে নাগাদ স্বাভাবিক লেনদেন চালু হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত জানা যায়নি বলে দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেনের মেসেজিং প্লাটফর্ম সুইফট তার গ্রাহকদের ব্যবহৃত সফটওয়্যার টুলসের নিরাপত্তা জোরদার, হিসাবের নিরাপত্তায় ফাঁক শনাক্ত করতে নতুন টুলসের উদ্ভাবন এবং পরিশোধের আদেশ অস্বাভাবিক মনে হলে ‘সতর্ক সঙ্কেত’ (রেড ফ্লাগ) দেখানোর বিষয়ে মে মাসে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত এলো।

বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি জানেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘনিষ্ঠ এমন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, চলতি সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফটের মধ্যে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে নিতে তিন পক্ষ সম্ভাব্য একটি সময়সীমার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে সূত্রটি জানালেও বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় নাম প্রকাশ না করে সূত্রটি বলেছে, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউ ইয়র্ক ফেড শুধু নিরাপদ যোগাযোগের জন্য সুইফট ব্যবহার করতে চায়।

“যত শিগগির সম্ভব যোগাযোগের পথগুলো স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।”

এবিষয়ে নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট হয়।

ওই অর্থের বেশির ভাগই একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ম্যানিলার ক্যাসিনোতে চলে যায়, যার কোনো হদিস নেই মেলেনি।

চুরির ঘটনার পর মৌখিক সত্যায়ন ছাড়া সুইফটের মাধ্যমে পাওয়া ঢাকার কোনো পরিশোধের আদেশ ছাড় করায় বিধিনিষেধ আরোপ কর বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে ফেডারেল ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই বা তিন কর্মকর্তার একজনকে কল করে তাদের কাছে সংরক্ষিত কণ্ঠের নমুণার সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েই তারা অর্থ ছাড় করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, নিছক সুইফট-নির্ভর লেনদেনের পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য ‘ব্যবস্থার উন্নয়নে’ আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে।

দুটি সূত্রই বলছে, প্রকৃত লেনদেনের আদেশে দেরি হওয়ায় নিউ ইয়র্ক ফেড বাড়তি নিরাপত্তা তুলে নিতে চাইছে। সুইফট বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছে, তাদের ব্যবস্থা নিরাপদই আছে। বরং নিরাপত্তা ভেদ করে নিজেদের কম্পিউটার ব্যবস্থায় অপরাধীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিজ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও কঠিন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, তিনি এই ধরনের ঐকমত্যের খবরের বিষয়ে অবগত নন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পরই তিনি মন্তব্য করতে পারবেন।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া সাইবার জালিয়াতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক ফেড এবং সুইফটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে রিজার্ভ হ্যাকিং সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত বিষয়, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং ইতোমধ্যে গৃহিত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি বলছে, চুরি যাওয়া সব অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপর চাপ দিতে নিউ ইয়র্ক ফেডকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল। এই ব্যাংকের চার অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই অর্থ শহরে ক্যাসিনোগুলোতে চলে যায়।

গত জুনে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক।

এই চুরির ঘটনায় জড়িত রিজল ব্যাংককে চলতি মাসে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে তা নিউ ইয়র্ক ফেডের চাপের কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন।