রিজার্ভ চুরি: তদন্ত প্রতিবেদন চাইলো সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি

রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ‘ক্ষোভ’ প্রকাশের পর এবার সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি ওই ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চেয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2016, 11:08 AM
Updated : 17 August 2016, 11:08 AM

বুধবার প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান কমিটির সভাপতি শওকত আলী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কমিটির আগামী বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ওই বৈঠকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বলা হবে। আগামী বৈঠকটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েই করা হবে।”

চলতি মাসেই কমিটির পরবর্তী বৈঠক আহ্বান করা হবে বলে জানান সাবেক এই ডেপুটি স্পিকার।

গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাকে বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এ বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়।  

ওই ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই সময়ই বলেছিলেন, তিনি এই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত ২১ জুন মুহিত বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে ঈদের পর।

আর গত ২১ জুলাই সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।”

গত ১১ জুলাই ওই তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না করার জন্য ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত মে মাসে কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে রিজার্ভ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, সুইফট, ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকসহ কার কার এ ঘটনায় দায় আছে তা জানতে চায় কমিটি।

এছাড়া ওই ঘটনায় বাংলাদেশের কেউ জড়িত থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মনিটরিং বাড়ানোর সুপারিশ

এদিকে বৈঠকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসার প্রেক্ষাপটে এ আলোচনা করা হয় বলে জানান কমিটির সভাপতি।

তিনি বলেন, “ইউজিসি তাদের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। কমিটি বলেছে, মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। শুরু থেকে যদি মনিটরিং জোরদার হতো তবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।”

“অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। ফি আদায় করেই কাজ শেষ। তাহলে ইউজিসির কাজ কী।”

বৈঠকে ইউজিসি কমিটির কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম রোধে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির পূর্ণাঙ্গ তথ্য যাচাই, মনিটরিং সেল গঠন, জঙ্গিবাদ নির্মূল সভা, মানববন্ধন, র‌্যালি, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ১৭১টি অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

কার্যপত্র থেকে জানা যায়, এই অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৩২২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এসব আপত্তির মধ্যে আর্থিক বিধি অনুসরণ করা হয়নি ১৩টি অডিটের ক্ষেত্রে। বাকি ১৫৮টি অডিট আপত্তি ‘অন্যান্য’ কারনে হয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি শওকত আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, “অডিট আপত্তিতো থাকাই উচিত নয়। আমরা বলেছি, আর্থিক বিধি অনুসরণ করে চললে আপত্তি আসার কথা নয়।”

সংসদ সচিবালয়ের এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

শওকত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য  নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, মুহিবুর রহমান মানিক, মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূইয়া, আবদুর রউফ এবং নাভানা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।