শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় বাঁধ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপকে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2016, 02:02 PM
Updated : 18 August 2016, 02:51 PM

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সি-ডাইক অংশে বাঁধ পুর্ননির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প’ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে।

শিগগির প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে শাহপরীর দ্বীপের ২ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার বাঁধ পুর্ননির্মাণ এবং ২ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশের দক্ষিণ পূর্ব কোনে ১৯৬৮-৭০ সালে শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার ৬৮ নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর থেকে আর কোনো পুনর্বাসন করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে পুনর্বাসন না করায় বাঁধটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে।

তার ওপর ১৯৭০, ১৯৯১ ও ২০০৯ সালের আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্য়োগের আঘাতে পোল্ডারটি অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ২০১২ সালের জুন মাসে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বর্ষণ ও সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে শাহপরীর দ্বীপের ওই বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেঙে যায়।

এরপর থেকে ওই বিশাল ভাঙা বাঁধ দিয়ে শাহপরীর দ্বীপের বিশাল এলাকা জুড়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে ফসল, রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, চিংড়ি ও লবণ চাষের চরম ক্ষতি হয়েছে।

এরপর ওই এলাকার জনসাধারণের প্রাণের দাবি হয়ে উঠে ওই বাঁধ নির্মাণ। এমন এক পরিস্থিতিতে সরকার এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।

শাহপরীর দ্বীপে বাঁধ নির্মাণের সময় বাঁধের পাড় মজবুত করে বেঁধে গাছ লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

মুস্তফা কামাল বলেন, সভায় এ প্রকল্পটিসহ এক হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার যোগান দেওয়া হবে।

এর মধ্যে ‘আখাউড়া- আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরে এ রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারত থেকে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অনুদান পাওয়া যাবে। ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে রেললাইনটি নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশের দিকে প্রথম স্টেশন হবে গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগর থেকে আখাউড়ার মধ্যে বর্তমান স্টেশনের পাশ দিয়ে তৈরি হবে নতুন রেল লাইন। এছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করবে ভারত। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এ রেলপথ। নিশ্চিন্তপুরে হবে সীমান্ত স্টেশন ও রেল ইয়ার্ড।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে অনুলিপি চূড়ান্ত হয়েছিল। ভারতের পক্ষে এতে সই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

গত বছরের জুনে ঢাকা সফরকালে এই প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের বর্তমাণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মন্ত্রী জানান, সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

চট্রগ্রাম জেলার বাপাউবোর আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলের পোল্ডার নং ৬১/১ (সীতাকুণ্ড), ৬১/২ (মীরসরাই) ও ৭২ (সন্দ্বীপ) এর বিভিন্ন অবকাঠামোসমূহের ভাঙন প্রতিরোধ, নিষ্কাশন এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প”। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

‘নগর ভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প’, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এছাড়া ‘ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় কমপ্লেক্স ৮ থেকে ১১ তলা নির্মাণ (৩য় পর্ব) প্রকল্প’, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।