‘বিশ্বকে অনেক দেওয়ার আছে বাংলাদেশের’

বাংলাদেশকে ‘একটি সফল উন্নয়নের গল্প’ অভিহিত করে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেছেন, নিজেদের উন্নয়ন অর্জনের অনেক কিছুই বাকি পৃথিবীকে দিতে পারে এই দেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2016, 12:35 PM
Updated : 9 August 2016, 12:35 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

চিমিয়াও ফান বলেন, “আমরা এখানে কেবল অর্থায়নই করি না। আমরা এখানে অন্য দেশ থেকে অভিজ্ঞতাও নিয়ে আসি। নানাভাবে বাংলাদেশ নিজেই সফল একটি উন্নয়নের গল্প। নিজেদের উন্নয়ন অর্জনের অনেক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ বাকি দুনিয়াকে দিতে পারে।”

স্বল্প জমিতে এতো বড় জনসংখ্যাতর এই দেশকে ১৯৭৪ সালের পর আর কখনও যে দুর্ভিক্ষে পড়তে হয়নি, তাকে ‘একটি বড় অর্জন’ হিসেবে চিহ্নিত করেন বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

“খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াও দারিদ্র বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা বিধানে বাংলাদেশের বিরাট অর্জন রয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পে চমকপ্রদ এক অধ্যায় হল তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন; যেখানে অধিকাংশ কর্মী নারী, তারা দরিদ্র প্রামীণ পরিবার থেকে এসেছে।”

‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে সচিবালয়ে আসেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে সময় ও খরচ কমাতে এই প্রকল্প বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। প্রস্তুতি পর্যায়ে থাকার কারণে এ প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, বেশ কয়েকটি স্থলবন্দরের উন্নয়নে এটি সহায়ক হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় এনবিএআরকে সহায়তা দেওয়া হবে এবং নারী উদ্যোক্তাদের সামর্থ্য বাড়াতে বিশ্ব ব্যাংক কাজ করবে বলে চিমিয়াও ফান জানান।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সংযোগে অনেকগুলো প্রকল্পের মধ্যে প্রথম এই প্রকল্প চার দেশের যোগাযোগে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

চিমিয়াও ফান বলেন, “বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। ২০১৫, ১৬ ও ১৭ অর্থ বছরে সেখানে বাংলাদেশের অংশ ৯ শতাংশের বেশি। এ কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।”

বাংলাদেশে সক্রিয় বিনিয়োগ প্রকল্পে এই মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণের পরিমাণ  প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।

“শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন, পানি ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, অর্থনৈতিক খাত, গ্রাম্য সড়ক ইত্যাদি খাতে বিশ্ব ব্যাংক কাজ করছে। বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাং কের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী,” বলেন কান্ট্রি ডিরেক্টর।  

পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার এই ব্রিফিং চলার মধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষের বিদ্যুৎ চলে যায়। 

সে দিকে ইঙ্গিত করে চিমিয়াও ফান বলেন, “জ্বালানি অবকাঠামো, বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ, সড়ক যোগাযোগ খাতসহ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে।”

অবশ্য বাংলাদেশ যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার চেষ্টা করছে, তার প্রশংসাও করেন তিনি।  

ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, চার দেশের সড়ক যোগাযোগ চুক্তি পুরোমাত্রায় বাস্তবায়ন করতে বিশ্ব ব্যাংক ‘ব্যাপকভাবে’ সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এ বিষয়ে একটি প্রকল্প তৈরি হবে।

এসব কাজ তদারকির জন্য একটি কমিটি হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজে ওই কমিটির চেয়ারম্যান।

“এটা নিয়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টিপিপি তৈরি করতে। এটা তৈরি হলে তা পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হবে। এরপর বাকি কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।

“এখন এটা নিয়ে গবেষণা হবে, বিশ্লেষণ হবে। সেখানে আমরা খুঁজে বের করব, কোন কোন কাজ করলে এই সংযোগ থেকে আমরা লাভবান হতে পারব।... বিশ্ব ব্যাংকও আমাদের এসব ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে।”

অতীতে বাংলাদেশকে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক আমাদের অনেক সহযোগিতা করছে। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বর্তমানে পাইপ লাইনে আছে। গত অর্থ বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ খরচ করতে পেরেছে। এই বছর ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাব এবং বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”