রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে ‘আরেক ধাপ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্জ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতির খবর দিয়েছে ফিলিপিন্সের সাংবাদমাধ্যম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2016, 06:52 AM
Updated : 22 July 2016, 06:52 AM

ফিলস্টরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কিম অংয়ের ফেরত দেওয়া অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি আবেদনে দেশটির নিম্ন আদালত ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। 

এখন বাংলাদেশ সরকার ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকার দাবি নিয়ে ওই আদালতে গেলে এবং আদালত তাতে সম্মতি দিলে ফিলিপিন্সে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।

বৃহস্পতিবার ম্যানিলায় ফিলিপাইন ন্যাশনাল ব্যাংকের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশটির মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাক আবাদ আদালতের সম্মতি পাওয়ার বিষয়টি জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় দুই কোটি ১৫ লাখ ডলার দেশটির রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক হয়ে  অংয়ের ক্যাসিনোতে ঢুকেছিল।

ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর গত এপ্রিল-মে মাসে কয়েক ধাপে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন অং।

এদিকে চুরি যাওয়ার অর্থের মধ্যে যে টাকা ফেরত পাওয়া গেছে, তা দ্রুত হস্তান্তরের পদক্ষেপ নিতে ফিলিপিন্সের নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ।

ফিলস্টারের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে গোমেজ বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট যেহেতু দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার, সেহেতু বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির বিষয়েও তার নজর দেওয়া উচিৎ। 

অংয়ের ফেরত দেওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক মাসের মধ্যে ফেরত পাবে বলেও অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গোমেজ বলেন, সোলারিজ রিসোর্ট অ্যান্ডর ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে জব্দ থাকা আরও ২.৭৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি ইতোমধ্যে তিনি ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট অ্যান্ড গেইমিং করপোরেশনের প্রধান আন্দ্রেয়অ ডোমিঙ্গোর সঙ্গে কথা বলেছেন।

টাকা ফেরত আনার জন্য আদালতের আনুষ্ঠানিকতা সারতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের একটি দল আগামী মাসের শুরুতে ম্যানিলায় পৌঁছাবেন বলেও রাষ্ট্রদূত জানান।

তিনি বলেন, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আর ফিলিপিন্সের তদন্তে কী বেরিয়ে আসে তা দেখার জন্যও বাংলাদেশ অপেক্ষায় আছে।  

গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।

শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে।

বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়।