আর্থিক খাত অত্যন্ত সন্ত্রস্ত: মুহিত

চুরি ও জালিয়াতি রোধে সরকারের পদক্ষেপের কারণে সমস্ত আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত সন্ত্রস্ত আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2016, 06:19 PM
Updated : 21 July 2016, 06:19 PM

বৃহস্পতিবারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে চুরি ও জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপ নিয়ে সরকারি দলের গোলাম রাব্বানীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদে একথা বলেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা গত বছর ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের চুরি ও জালিয়াতির অনেক নিদর্শন পেয়েছি। সেটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেসব জালিয়াতি হয়েছে তার মামলা চলছে।খবরের কাগজে দেখে থাকবেন পুরনো হলমার্কের মামলা আবার চলছে এবং সেখানে ধড়পাকড়ও চলছে।

“কাজেই এই বছর ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে আমরা একটু বিশেষ নজর দিচ্ছি এবং সেই অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছি। এ বছরের কার্যক্রমে জালিয়াতি ও চুরি রোধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। সমস্ত আর্থিক খাত এ বছর অত্যন্ত সন্ত্রস্ত আছে এবং নিজেরাই এই অবস্থার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”

তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোর দেওয়া এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি তিন লাখ টাকার ঋণের মধ্যে বর্তমানে (৩১ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত) খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

অর্থমন্ত্রীর হিসাব অনুযায়ী, মোট ঋণের মধ্যে খেলাপী হচ্ছে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এর মধ্যে সব থেকে বেশি খেলাপী ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির ২৯ হাজার ৪০৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ‌ঋণের মধ্যে খেলাপী সাত হাজার ৯৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের ২১ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী চার হাজার ৫৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক হাজার ৪৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী ৬৩০ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এছাড়া বেসিক ব্যাংকের ১২ হাজার ৭০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী ছয় হাজার ৩০০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩২ হাজার ৬১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী দুই হাজার ৮৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৪ হাজার ৪৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী এক হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

অন্যদিকে কৃষি ব্যাংকের ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী তিন হাজার ৮৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চার হাজার ৪৩৬ কোটি পাঁচ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপী ৮০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থ বছর শেষে অনিষ্পন্ন সার্টিফিকেট মামলা ছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ৮১১টি, যা কমে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এক লাখ ৮৮ হাজার ১৫৭টিতে দাঁড়িয়েছে।

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকির প্রবণতা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের দেশে ঠিক কতহারে এ ধরনের কোম্পানি কর ফাঁকি দিয়ে থাকে তা নিরূপন করা দূরহ।

“বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান চুক্তিসমুহ পরিমার্জনের লক্ষ্যে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুরনো দ্বৈতকর পরিহার চুক্তিসমূহ পুর্নবিবেচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাছাড়া এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান হালনাগাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন আয়কর আইনে সংযোজন করা হয়েছে।”

ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের অপব্যবহার বন্ধ ও আন্তঃসীমান্ত কর ফাঁকি রোধের বিষয়টি ‘অধিকতর গুরুত্ব সহকারে’ বিবেচনা করে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে রাজস্ব বোর্ডে একটি স্বতন্ত্র ট্রান্সফার প্রাইসিং ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান মুহিত।

বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ৫ বছরে ১৬টি চালানের মাধ্যমে আট হাজার ৪২৮টি মোবাইল আটক করা হয়েছে।