নভেম্বরে কাজে নামবে ‘আরভি মীন সন্ধানী’ 

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় মৎস্য সম্পদ জরিপের জন্য মালয়েশিয়া থেকে আনা গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ‘আরভি মীন সন্ধানী’ নভেম্বরে কাজে নামবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2016, 10:15 AM
Updated : 19 July 2016, 12:04 PM

মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার মৎস্য ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “অক্টোবর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। সেই হিসেবে নভেম্বরে জরিপের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিস্পত্তি হওয়ায় বর্তমানে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার টেরিটোরিয়াল সমুদ্র ও ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে বাংলাদেশের অধিকারে।

এর মধ্যে তটরেখা থেকে ৪০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ৩২ হাজার ৪৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬৮ হাজার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক ছোট ট্রলার এবং জেলে নৌকা মাছ ধরে। ওই এলাকায় সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো বাণিজ্যিক ট্রলার মাছ ধরতে পারে না।

সাগরে মৎস্য আহরণের দ্বিতীয় স্তরটি হলো ৪০ মিটারের পর থেকে ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকা। আর ২০০ মিটার গভীরতার এলাকা থেকে একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার সীমানা পর্যন্ত হলো তৃতীয় স্তর।

এই দুটি স্তরে সরকার অনুমোদিত প্রায় আড়াইশ বাণিজ্যিক ট্রলার মাছ ধরতে পারে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবনযাত্রা মাছ চাষ ও বাণিজ্যিক পরিবহণের মতো সমুদ্র অর্থনীতির কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল।  

মন্ত্রী বলেন, সরকার বঙ্গোপসাগরে গবেষণা ও জরিপ চালানোর মাধ্যমে মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যসম্পদের মজুদ ও সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণ মাত্রা নির্ণয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।

“সেই লক্ষ্যে আরভি মীন সন্ধানী  নামের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন গবেষণা ও জরিপ জাহাজটি মালয়েশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে।”

আরভি মীন সন্ধানী

দৈর্ঘ্য: ৩৭.৮০ মিটার

ব্যয়: ১৬৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা

অর্থায়ন: ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও মালয়শিয়া সরকার

ধারণ ক্ষমতা: কাজ করতে পারেন ২৮ জন ক্রু ও গবেষক

মূল ইঞ্জিনের ক্ষমতা: ১৪০০ হর্স পাওয়ার, ১৮০০ আরএমপি

মন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের জাহাজগুলো কত মিটার গভীরতায় মাছ ধরছে মৎস্য অধিদপ্তর তা স্থলভাগ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না। এ বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩৩টি ট্রলারে ‘ভেসেল মনিটরিং সিসটেম ডিভাইস’ সংযোজন করা হয়েছে।

২০০ মিটার গভীরতার বাইরে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা জাতীয় মাছ ধরার জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপত্র দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

দেশে বর্তমানে মাছের চাহিদা ৪২ থেকে ৪৩ লাখ মেট্রিকটন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রতি বছর আমরা এক থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বাড়াচ্ছি। সে হিসেবে ২০১৮ সালের মধ্যে মাছের চাহিদা পুরণ হবে।”

বিদায়ী অর্থবছরেও ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে বলে ছায়েদুল হক জানান।

এ বছর মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘জল আছে যেখানে, মাছ চাষ সেখানে’। মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সকালে একটি শোভাযাত্রা বের হয় রাজধানীতে।

মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ১৫ লাখ জেলের নিবন্ধন হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৩০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ৪৮৭ জন নিহত জেলে পরিবারের মধ্যে মোট ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।