রেমিটেন্স প্রবাহে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি

রেমিটেন্স প্রবাহে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হল ২০১৫-১৬ অর্থবছর, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো ঘটল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2016, 02:18 PM
Updated : 12 July 2016, 02:18 PM

এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো আগের বছরের চেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছিল।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের কম দাম এবং বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতনের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহে ‘ধাক্কা’ লেগেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১ হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন (১৪.৯২ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাংলাদেশে এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসেছিল ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

সেই হিসাবে গেল অর্থবছরে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছে।

আর ২০১১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তার আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছিল ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১২ মাসের (জুলাই-জুন) মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে গত জুনে।

তার আগে মে মাসে এসেছিল ১২০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।

ঈদুল ফিতরের আগে রমজান মাসে বরাবরই প্রবাসী আয় বেশি আসে বাংলাদেশে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। গত মে মাসে এই ব্যাংকগুলো ৩৮ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এনেছিল। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে জুনে ১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।

একই সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। আর বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে প্রতি বছরই প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নেতিবাচক হতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় পরের অর্থবছর ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

অবশ্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে। তবে পরের বছরই অর্থাৎ গেল অর্থবছরে আবার প্রবাসী আয় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হল।

মার্কিন মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ইউরো, সিঙ্গাপুর ডলার, মালয়েশিয়ান রিংগিতসহ অন্যান্য মুদ্রার দরপতনের কারণে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউরোপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেসব দেশের মুদ্রার বেশ খানিকটা অবমূল্যায়ন হয়েছে।

“সেই অবমূল্যায়নের ফলে সে সব দেশে আবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে কম অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এটাই রেমিটেন্স কমার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় রেমিটেন্স প্রবাহের ‘ধীরগতির’ কথা স্বীকার করেন।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা কম প্রবাস আয় দেশে এসেছে। তবে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন, নিরাপদ অভিবাসনসহ আমাদের নানামুখী পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাস নিয়োগ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“তাই আমার বিশ্বাস, অচিরেই প্রবাসী আয়ের প্রবাহে গতিশীলতা আসবে।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসে। অগাস্টে আসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৩৫ কোটি ডলার আসে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আসে যথাক্রমে ১১০ কোটি, ১১৪ কোটি ২৫ লাখ এবং ১৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।

ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। মার্চ  ও এপ্রিল মাসে এসেছিল যথাক্রমে ১২৮ কোটি ১১ লাখ এবং ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।