রপ্তানিতে উৎসে কর কমতে পারে

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর কমানোসহ কর সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাস হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেট, যাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরা হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 04:55 PM
Updated : 28 June 2016, 07:14 PM

এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেটজাত খাদ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং সবজি রপ্তানিকারকদের উৎসে করও কমানো হচ্ছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় এই আভাস দেন।  

প্রতিবারই বাজেট উপস্থাপনের পর সংসদ সদস্যদের এবং সংশ্লিষ্টদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পাসের সময় কিছু পরিবর্তন আসে।

এবার কী ঘটছে- জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “আমার এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না। কর সংক্রান্ত ছোটো-খাটো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।”

পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর কমানো হবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে জোরালো দাবি উঠেছে; দেখা যাক।”

বিএনপিবিহীন সংসদে এবারের বাজেট আলোচনা নিয়ে সন্তুষ্ট মুহিত বলেন, “কিছু কিছু বিষয়ে সমালোচনা হয়েছে; প্রশংসাও করেছেন অনেকে। কিছু সংযোজন-বিয়োজনেরও প্রস্তাব এসেছে।”

এ সব বিবেচনায় নিয়েই বুধবার অর্থবিল এবং বৃহস্পতিবার মূল বাজেট পাস হবে, বলেন অর্থমন্ত্রী।

১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য গত ২ জুন ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন মুহিত।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও কয়েকজন বাজেটের উপর আলোচনা করবেন।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বাজেটের উপর আলোচনা করবেন। সবার আলোচনা বা মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে কিছু সংযোজন-বিয়োজন আনা হতে পারে।

বুধবার অর্থবিল ২০১৬ পাস হবে। অধিবেশন শুরু হবে সকাল ১০টায়। অর্থবিল পাসের আগে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।

তারপর অর্থমন্ত্রী তার বাজেটের উপর সমাপনী বক্তব্য দেবেন এবং অর্থবিল পাসের জন্য উত্থাপন করবেন।

এই সংসদেই পাস হবে বাজেট

প্রথা অনুযায়ী, কোনো সংশোধনী আনতে হলে অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য এবং অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ আমলে নিয়ে সেসব বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেন।

টানা অষ্টমবার বাজেট উপস্থাপনকারী মুহিত এবারের বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর কড়া সমালোচনায় পড়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাজেটকে সামনে রেখে অনেক খেটে-খুটে আমরা ৪৪৭টি প্রস্তাব বা সুপারিশ দিয়েছিলাম। তারমধ্যে মাত্র ৫৩টি রাখা হয়েছে।অর্থ্যাৎ আমাদের সুপারিশের মাত্র ১০ শতাংশ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

“এফবিসিসিআই সভাপতি হিসেবে এজন্য আমি লজ্জিত।”

এছাড়া বাজেট ঘোষণার পর থেকেই তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএসহ তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে পোশাক রপ্তানির উৎসে কর কমানোর দাবি জানানো হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের তাদের রপ্তানিমূল্যের (এফওবি) ওপর দেড় শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু পোশাক রপ্তানিকারকদের আপত্তির মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট পাসের সময় অর্থবিলের সংশোধনীতে পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ করা হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বাজেটে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেটজাত খাদ্য, হিমায়িত খাদ্য ও সবজি রপ্তানিকারকদের উপর দেড় শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হারও কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ১২০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত হাওয়াই চপ্পল ও প্ল্যাস্টিকের পাদুকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

কেজিপ্রতি ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত হাতে তৈরি বিস্কুট-কেক ও পাউরুটির ওপর মূসক অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া মেডিটেশন সেবার ওপর মূসক আরোপের প্রস্তাবটিও প্রত্যাহার করা হতে পারে এনবিআর কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।