অর্থ পাচারের কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা: ফরাসউদ্দিন

অর্থ পাচার বন্ধে ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন’ ঘটানোর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আরও ভালো করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 12:34 PM
Updated : 25 June 2016, 12:34 PM

রাজধানীতে শনিবার এক সেমিনারে তিনি মুদ্রা বিনিময় হার ‘বাজারভিত্তিক’ করার ওপরও জোর দেন।

ব্র্যাক ইন সেন্টারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ‘অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ফরাসউদ্দিন জানান, ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। যা তার আগের বছরের তুলনায় ৩৫ ভাগ বেশি। একইভাবে ২০০৮ সালে যে পাচার হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ ভাগ বেশি। অর্থ পাচারের দুটো পরিসংখ্যানই দুই জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর।

তিনি বলেন, “অর্থ পাচার কমাতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও ভালো করতে হবে।

“আমি সব সময় মনে করি যদি বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে উৎসাহী কম হয়, সেজন্য সরকারকে দায় নিতে হবে। সরকারকেই বিনিয়োগ বান্ধবতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই রকম নীতি কৌশল নিতে হবে।”

বঙ্গবন্ধুর সাবেক একান্ত সচিব ফরাস উদ্দিন বলেন, “অনেকে বলেন মূলধন হিসাব উদারীকরণ করতে। আমি বরং বলব তার আগে মুদ্রা বিনিময় হার সত্যিকারভাবে বাজারভিত্তিক করতে। ২০০৩ সাল থেকে বাজারভিত্তিক করা আছে নামে মাত্রই। কিন্তু তা আগের মতোই। মাসের পর মাস ওইটা ঠিক করা হয় না। ওইটা ঠিক করা হলে অনেক ছোটখাটো পাচার উৎসাহ পেতো না।

“আমার মনে হয় টাকা অতিমূল্যায়িত হলে টাকা কম আসবে, পাচার বেশি হবে। টাকার অতি মূল্যায়নটা খুব খারাপ।”

সিপিডি অনেক ভালো কাজ করলেও সরকারের কোনো অর্জন প্রকাশে ‘লজ্জাবোধ’ করে বলে মনে করেন তিনি।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির হার যদি সাড়ে ৬ ভাগ প্রাক্কলন করা হয়। উনারা বলেন সাড়ে ৫ ভাগের বেশি কিছুতেই হবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে দেশ বিনিয়োগ পাচ্ছে না, সে দেশ থেকে পুঁজি বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগযোগ্য টাকা আছে তা বিনিয়োগ হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক ঘটনা।

“এটার কারিগরি সমাধান সম্ভব।প্রতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান করা যায়,” বলেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম টাকা দেশে রাখতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধে নীতি সহায়তা আধুনিকায়নের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, “যদি কেউ মনে করে জীবনের বা সম্পদের নিরাপত্তা নেই।তখন মানুষ বিদেশে টাকা পাচার করে। দ্বিতীয়ত: বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ না থাকলে টাকা পাচার হয়।’

সেমিনারে বিশেষ অতিথি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “যে দেশে বেশি সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবে, টাকা সে দেশেই যাবে। দেশে বাণিজ্যিক উদারীকরণের মাধ্যমে পাচার রোধের পাশাপাশি আইন ও সুশাসনের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।”

আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক আবু আহমেদ। প্যানেল আলোচক ছিলেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান।