গ্যাস পেতে আরও দুই বছর: বিনিয়োগকারীদের অর্থমন্ত্রী

শিল্প খাতে গ্যাস সমস্যার সমাধানে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2016, 04:08 PM
Updated : 23 June 2016, 05:36 PM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফআইসিসিআই) প্রতিনিধিরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গ্যাসসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরলে তিনি একথা জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি কেবল একটা বিষয়ে কথা বলব... কেবল গ্যাসের কথা, এটা ২০১৮ সালের আগে পাওয়া যাবে না। এলএনজি টার্মিনাল হচ্ছে। সেখান থেকে পাওয়া যাবে।”

শিল্প কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ার মধ্যে বিদেশ থেকে জাহাজে করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এনে তা সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মহেশখালীতে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল করা হচ্ছে।

প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘন মিটার এলএনজি ধারণ ক্ষমতার এই টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।

সব ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের শুরুর দিকেই জাহাজে করে আমদানি করা গ্যাস এই টার্মিনাল হয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

অর্থমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থাকে ‘বেশ ভালো’ বলায় সাক্ষাতে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এফআইসিসিআই সভাপতি রূপালী চৌধুরী।

সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে হওয়া এই সাক্ষাতে রূপালী চৌধুরী অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকে বেশ ভালো উন্নতি বলেছেন, এটা কার্যত কিছুই না। আমরা যদি তুলনা করি, ভিয়েতনামে ৩৫ বিলিয়ন, মিয়ানমারের অবস্থান আমাদের উপরে। এটা বলা আমাদের উচিত নয়।

“আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে, এখানে আমরা ভালো করছি না। কেন পারছি না- সেটা আমাদেরকে ভাবতে হবে।”

এসময় জ্বালানিসহ বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান এফআইসিসিআই সভাপতি।

“আমাদের এই সংক্রান্ত ইস্যুগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে; ভূমি, জ্বালানি ও নিরাপত্তা এই সংক্রান্ত ইস্যু। গ্যাস এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎ রয়েছে, কিন্তু সঞ্চালন লাইন নেই। কেউ বিদ্যুৎ চাইলে তাকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। সুতরাং গ্যাস ও বিদ্যুৎ নেই।”

বিনিয়োগের সার্বিক পরিবেশ উন্নত করার তাগিদ দিয়ে রূপালী বলেন, “আমাদের বিদেশি বিনিয়োগের দরকার নাই; বিনিয়োগ বিনিয়োগই ... টাকা টাকাই। সেটা বিদেশি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

“কোন শিল্পের প্রবৃদ্ধি কত সেটা দেখে এনবিআরকে ট্যাক্স ঠিক করতে হবে। ... ট্যাক্স বাড়াতে বললেই হবে না।”

জবাবে গ্যাস পেতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিদের জানান অর্থমন্ত্রী।

প্রসঙ্গক্রমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘জীবনের সেরা বাজেট’ বলেও উল্লেখ করেন।

এফআইসিসিআই প্রতিনিধি দলে থাকা লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মাসুদ খান পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত সব কোম্পানির ক্ষেত্রে অর্থবছরের হিসাব জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত করার দাবি জানান।

“তালিকভুক্ত সব কোম্পানিকে অর্থবছর জুলাই থেকে জুন করতে হবে। আমরা সারা দুনিয়াতে ৯০টি দেশে কাজ করি। কনসোলিশন কীভাবে করব। কারণ পৃথিবীর অন্য সব দেশেরটা কীভাবে এখান থেকে বদলে দেব।”

ভ্যাটের অডিট আপত্তির ক্ষেত্রে আপিল করতে আপত্তির ৫০ ভাগ অর্থ জমা দিতে হবে বলে বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাকে ‌‘বাস্তবতাবহির্ভূত’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

আগে অডিট আপত্তির ক্ষেত্রে আপিল করতে আপত্তির ৫ ভাগ অর্থ জমা দিতে হতো বলেও জানান এফআইসিসিআই প্রতিনিধি দলের এই সদস্য।