সবার নজর ভ্যাটে

রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভ্যাট থেকে সরকারের বড় প্রত্যাশা এবং এর বিপরীতে ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের হুমকির মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট ব্রিফকেস খোলার আগ পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সেই ভ্যাট।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2016, 05:10 AM
Updated : 2 June 2016, 07:45 AM

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট পড়তে শুরু করবেন মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের এই মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি।

বাজেট সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরেই আলাচনা-সমালোচনা-বিতর্ক চলছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে।

পহেলা জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাটই আরোপিত হচ্ছে, নাকি কমছে; বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাট উঠে যাবে, না কি অন্য কিছু- এমন প্রশ্ন ঘুরছে বাজেট নিয়ে আলোচনায়। 

বাজেট ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী অনেক বিষয়ে খোলামেলা কথা বললেও ভ্যাটের বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “ভ্যাটের বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। যা বলার আমার বাজেটেই বলবো… ।”

# ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ ২০১২ সালে করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এতদিন বাস্তবায়িত হয়নি। ওই আইনই নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে কার্যকর করার কথা বলছে সরকার।

# এ আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে টার্নওভার বছরে ৩০ লাখ টাকার নিচে হলে ব্যবসায়ীকে ভ্যাট দিতে হবে না।

# ব্যবসায়ীরা বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে রাজি নন। তারা আগের মতো এলাকা ও ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এনবিআরের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট হারের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালু রাখার পক্ষে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা।

# ১৫ শতাংশ ভ্যাট চালু না করার দাবিতে গত ৩০ মে এক ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজেটে দাবি মানা না হলে ‘বড় ধরনের আন্দোলনের’ হুমকিও তাদের রয়েছে।

# কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশও (ক্যাব) ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এতে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে; ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বাড়বে।

# বর্তমানে আড়াই লাখ প্রতিষ্ঠানের মূসক নিবন্ধন থাকলেও মাত্র ৬৮ হাজার প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাট দেয়।

এ পরিস্থিতিতে সরকার কী ভ্যাট নিয়ে পিছু হটবে?

অর্থমন্ত্রী ছোট ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে পরিমাণে বাড়িয়ে প্যাকেজ ভ্যাটই বহাল রাখতে পারেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তবে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত।

১৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে একটি সমাধান প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুপক্ষকেই নমনীয় হতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রথম এক বছরের জন্য ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে।”

বড় ধরনের রাজস্ব আদায় ছাড়া যে বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে না- সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ফরাসউদ্দিন।

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতও একেবারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর না করে ধাপে ধাপে এগোনোর পক্ষে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বাজেট ভ্যাটনির্ভর হলে তা ভালো নাও হতে পারে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মূসক থেকেই ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার।

নতুন অর্থবছরে মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো।

বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।

১০ মাসের হিসাবে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে এনবিআর। সে কারণেই লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

পাশাপাশি মোট বাজেটের আকার সংশোধন করে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

এবার নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এনবিআর-নন এনবিআর মিলে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

এনবিআরের মাধ্যমে এবার ২ লাখ ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা আদায় করার হিসাব কষেছেন অর্থমন্ত্রী, যার মধ্যে ভ্যাট থেকেই ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে।

নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে; ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা নিয়ে বাজেট দেবেন মুহিত।

সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের (জিডিপির) মধ্যেই থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন।