বাজেট: ৭৮৬ কোটি থেকে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা

৪৫ বছরের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে চারশ গুণ বড় হওয়া বাজেট নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দাঁড়াবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2016, 05:14 PM
Updated : 1 June 2016, 06:47 AM

টানা বাজেট দিয়ে রেকর্ড স্থাপনকারী মুহিত এবারেরটিসহ ১০টি বাজেট দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ঐ বাজেট দিয়েছিলন প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন।

৪৪ বছর পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৪৫তম যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন তার আকার হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ হিসাবে এই সময়ে বাজেটের আকার বেড়েছে ৪৩২ গুণ বেশি।

আর একাধারে আট বার বাজেট দিয়ে নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে বাংলাদেশের কোন অর্থমন্ত্রী টানা ছয়টির বেশি বাজেট দেননি।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অশীতিপর মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।

আর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলন মুহিত।।

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া একাধারে ছয়টি বাজেট দেন।

সবচেয়ে বেশি বাজেট দেয়ার রেকর্ড এখনো আরেক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের। তিনি মোট ১২টি বাজেট দিয়েছেন।

দশম বাজেটে উপস্থাপনের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীতে আমিই সম্ভবত একমাত্র অর্থমন্ত্রী ৮৩ বছর বয়সেও বাজেট দিয়ে যাচ্ছি।এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের।

“আর ইতিমধ্যেই আমি কিন্তু একটি রেকর্ড করে ফেলেছি। গতবারসহ টানা সাতটি বাজেট দিয়েই সেই রেকর্ডটি করেছি। এবার আটটি হবে। আরেক ধাপ এগিয়ে যাবো…।”

আরও কয়টি বাজেট দেবেন, সাইফুর রহমানের রেকর্ড ভাঙ্গবেন কীনা- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “কি রেকর্ড হলো না হলো, সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। বয়সের ভারে পারি না; আমি তো চাই, এটাই আমার শেষ বাজেট হোক।

“এর আগেও আমি অবসরে যেতে চেয়েছি; কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে পারিনি…। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজ কমিয়ে দেন। কিন্তু সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে গেলে কি আর কাজ কমানো যায়।”

আপনার এবারের বাজেট কেমন হবে – প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “আমাদের এই সরকারের শেষ বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরকে সামনে রেখেই এবারের বাজেট দিতে যাচ্ছি। সেভাবেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ বছরে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেবো সেটাও এখনই ঠিক করে ফেলেছি। আমাদের সব কর্মকাণ্ডই এখন পরিচালিত হবে ২০১৮-১৯ বছরকে ঘিরে।”

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে বলে জানান মুহিত।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। দশ মাসের হিসাবে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে এনবিআর। সে কারণেই লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

পাশাপাশি মোট বাজেটের আকার সংশোধন করে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

এরপরও নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুহিত।

ভ্যাট (মূল্যসংযোজন কর-মুসক)  আদায়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্য ছিল ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা নিয়ে বাজেট দেবেন মুহিত।

পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন

গত কয়েকবারের মতো এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

ঐ দিন বাজেট বক্তৃতা; সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি; প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব; সংযুক্ত তহবিল-প্রাপ্তি; মঞ্জুরী ও বরাদ্দের দাবীসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন); বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন); নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চল্লিশটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম; শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা; মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি; মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো; বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি; বাজেটের সংক্ষিপ্তসার; দক্ষতা উন্নয়ন-উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার, কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প: প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রাঃ হালচিত্র ২০১৬ ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ হতে সরবরাহ করা হবে।

একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী- ২০১৫-১৬ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।

বাজেটকে আরো অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd -এ বাজেটের সকল তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে।

প্রাপ্ত সকল মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।

ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ওয়েবসাইট লিংক www.bangladesh. gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www. bdpressinform.org, www.pmo.gov.bd এবং বেসরকারি ওয়েবসাইট লিংক www. bdnews24.com  ঠিকানায় বাজেট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।

শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন

প্রথা অনুযায়ী, বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে তিনি তার দেয়া বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।

বিকেল ৪টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলন হবে।

বাজেটের আকার এবং অর্থমন্ত্রীর তালিকা

১৯৭২-৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৭৩-৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা

১৯৭৪-৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

১৯৭৫-৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

১৯৭৬-৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

১৯৭৭-৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা

১৯৭৮-৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা

১৯৭৯-৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা

১৯৮০-৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা

১৯৮১-৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা

১৯৮২-৮৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৩-৮৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা

১৯৮৪-৮৫ এম সাইদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা

১৯৮৫-৮৬ এম সাইদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৬-৮৭ এম সাইদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা

১৯৮৭-৮৮ এম সাইদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা

১৯৮৮-৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা

১৯৮৯-৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা

১৯৯০-৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা

১৯৯১-’৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

১৯৯২-৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা

১৯৯৩-৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা

১৯৯৪-৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা

১৯৯৫-৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা

১৯৯৬-৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা

১৯৯৭-৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৯৮-৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

১৯৯৯-০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা

২০০০-০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

২০০১-০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা

২০০২-০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

২০০৩-০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা

২০০৪-০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা

২০০৬-০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা

২০০৭-০৮ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৮-০৯  এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৯-১০ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা

২০১০-১১ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা

২০১১-১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা

২০১২-১৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা

২০১৫-১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

২০১৬-১৭ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৩ লাখ ৪০ হাজার  কোটি টাকা (সম্ভাব্য)