২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে আগামী ৫-৬ বছর এর ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় দেশে বিদ্যুতের ‘মহাসংকট’ ছিল। প্রথম দিকের বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও পরিবহণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দুই খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসার পর সরকারের নজর এখন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে।
তবে ব্যয় ঝট করে বাড়ানো যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এজন্য এই দুই খাতে নজর দেওয়া কষ্টকর। এটা বাড়াতে সময় লাগে।
“শিক্ষার জন্য শিক্ষক বাড়াতে হবে, শিক্ষার উপকরণ সংস্কার ও সরবরাহ করতে হবে। এত সব করলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। তবে আমি দেখছি, এবারের বাজেটে বোধ হয়, শিক্ষার বরাদ্দ বেশ কিছুটা বাড়বে। সেটা সম্ভব হবে।”
এবার শিক্ষাখাতে যে পরিবর্তন আসছে তা আরও ৫-৬ বছর নিরলসভাবে চললে এক্ষেত্রে দেশ একটা ‘উল্লেখযোগ্য’ অবস্থানে যেতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষায় নজর দেওয়ার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা ‘জোরদার’ করা উচিত বলে মনে করেন মুহিত।
“আমাদের সরকারের এখন হওয়া উচিত, সেটাই হবে বড় প্রয়োজন- মাধ্যমিক শিক্ষাকে জোরদার করা। শুধু সংখ্যায় নয়, গুণগতভাবেও। তবে শিক্ষার যখন প্রসার হয়, গুণগত মানও বাড়তে থাকে।”
বর্তমানে প্রাথমিকে ৯৯ শতাংশ ছেলে-মেয়ের অন্তর্ভুক্তি হলেও মাধ্যমিকে এই হার ৬০ শতাংশ বলে জানান মন্ত্রী।
“মাধ্যমিকে আরও শিক্ষার্থী নিয়ে আসলে মাধ্যমিকের মানও বাড়তে থাকবে। সেদিকে নজর দেওয়া সরকারের কর্তব্য। মান যাতে বাড়ে সেজন্য শিক্ষকের প্রশিক্ষণের দরকার। সেটা আমাদের করে দিতে হবে।”
সরকারের এই মেয়াদে মাধ্যমিকে প্রবেশের হার ৮০ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলে পরের উন্নয়ন ‘সময়সাপেক্ষ’ হবে বলে মনে করেন মুহিত।
তিনি বলেন, “সেটা বছর পূরণের সাথে সাথে হয়ে যায়। সেজন্য আশা করা যায়, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক শিক্ষায় সেই বয়সের সব ছেলে-মেয়ে আবৃত হবে।
“গুণগত মান দ্বিতীয় লক্ষ্য। কারণ ওইটা যখন হবে, তখন অটোমেটিক গুণগত মানও বাড়তে থাকবে।”
মান নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মন্ত্রী: “এখন প্রাইমারি স্কুলে যান যদি, গিয়ে দেখেন, শিক্ষকের ওপর অশিক্ষিত অভিভাবকদেরও কী চাপ... ‘কি মাস্টার সাহেব কী পড়াচ্ছেন? ছেলেতো এটা জানে না, ওইটা জানে না’। এই যে মানোন্নয়নের দাবি, শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। সেটা উন্নতও হয়।”
বিভিন্ন দেশে মহান রাষ্ট্রনায়করা শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন, ভারতের জওহরলাল নেহেরু এবং বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিন বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের সময় ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।
“তিনি (সুকর্ন) খুব সফল শাসক ছিলেন না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়াকে শিক্ষিত করে তোলেন। আজকে সেই দেশে স্বাক্ষরতার হার ৯৩ শতাংশ।
“বঙ্গবন্ধু অল্পদিন ক্ষমতায় থাকলেও তিনি এই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন।”
বক্তব্যে উন্নত দেশে শিক্ষা ঋণের সুফলের কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। শিক্ষার প্রসারে ঋণ চালুর বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “আমি কয়েকবার শিক্ষা ঋণ নিয়ে কথা-বার্তা বলেছি, কিন্তু সাহস হয় নাই। আমরা এত গরিব যে, সেখানে ঋণ নিয়ে খুব শিক্ষা হতে পারে তা আমাদের ভাবনায় ছিল না।
“আমরা এই মুহূর্তে তত গরিব নই, সুতরাং এই সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করতে পারি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান একে আজাদ খেলাপি ঋণ উদ্ধার এবং ব্যাংকের সিএসআরের টাকা শিক্ষায় দেওয়ার দাবি তোলেন।
সরকারি হিসাবে মোট ঋণের ১০ শতাংশ খেলাপি বলে উল্লেখ করা হলেও এর প্রকৃত পরিমাণ ২০ শতাংশের কাছাকাছি বলে হিসাব দেন তিনি।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় খেলাপি ঋণ মোট ঋণের অর্ধেক ছিল।
বাজেটের পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তির টাকা দেওয়া হয়।