‘শিক্ষকের মান রাখতে’ শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধি চান ঢাবি উপাচার্য

নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধর ও লাঞ্ছনার প্রসঙ্গ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, শিক্ষকদের সম্মানজনক পরিবেশের জন্য বাজেটেও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2016, 12:42 PM
Updated : 21 May 2016, 12:42 PM

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘জন-বাজেট-সংসদ’ শীর্ষক দিনব্যাপী ‘ছায়া বাজেট’ অধিবেশনে তিনি একথা বলেন।

উপাচার্য আরেফিন বলেন, “দায়িত্বের দিক থেকে আমাদের সবাইকে সংবেদনশীল হতে হবে। শিক্ষককে সম্মান করতে হবে। একজন জনপ্রতিনিধি যদি শিক্ষককে হেয় করেন তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

“শিক্ষকদের সম্মানজনক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তাই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাতে মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে আগ্রহী হবে। মেধাবী শিক্ষক না হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে না। জাতীয় অগ্রগতিও সম্ভব নয়।”

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার লতিফ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধোর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

শিক্ষা খাতে বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং অগ্রাধিকার দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা। প্রতিরক্ষা খাতের প্রয়োজন আছে। তবে দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি না থাকলে ভালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়া যাবে না।

“দক্ষ ডাক্তার না থাকলে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে না। কৃষিতে ভালো ছাত্র না থাকলে ভালো কৃষি বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে না। সুশিক্ষিত রাজনীতিবিদ না থাকলে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”

এজন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার প্রসঙ্গ তুলে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শিক্ষকদেরও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষকদের মতো বিদেশে পড়াশুনা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসি এবং গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে আয়োগিত এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি কবি কাজী রোজী, ককাসের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক শামসুল আলম, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দীন আহমদ, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সভা প্রধান প্রতিমা পাল মজুমদার প্রমুখ।

উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ জন অংশীদারিত্বের সন্ধানে’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

জনসম্পৃক্ততা নিয়ে বাজেট প্রণয়নে এই ‘ছায়া বাজেট সংসদ’ অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “এই ছায়া বাজেট সংসদ-এর বিশ্লেষণধর্মী ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনে এক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভ করবে, যদি দেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান বিরাজ করে।”

বাজেট বাস্তবায়নে নিয়মিত কর দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দের বিকল্প নেই তবে পল্লী বাংলার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। কল্যাণমূলক বাজেট পেতে হলে জনগণকেও অংশগ্রহণের দায়িত্ব নিতে হবে, নিয়মিতভাবে সবাইকে কর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, শ্রম-কর্মসংস্থান, কৃষি প্রতিবন্ধিতা, জেন্ডার, তারুণ্যের বাজেটসহ জাতীয় পরিকল্পনায় জনঅংশগ্রহণ, বাজেটের বিকেন্দ্রীকরণ ও বৈষম্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন অধিবেশনে আলোচনা হয়।

দিনব্যাপী এই অধিবেশনে সারাদেশের জনপ্রতিনিধি, গবেষক ও বাজেট বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।