তিনি বলেছেন, “তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন তথ্যের অবাধ প্রবাহকে যেমন সহজতর করেছে তেমনি এর ক্ষতিকর ব্যবহার জাতিসমূহকে ভাবিয়ে তুলছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সাইবার আক্রমণ কেবল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নয়, আমি মনে করি, বিশ্বের সব আর্থিক ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”
বুধবার বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাইবার হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তির এই ক্ষতিকর দিক থেকে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রসমূহকে সুরক্ষা করা যায়- তা নিয়ে ভাবতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে সাইবার হামলার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
“কারণ আমি মনে করি, সাইবার আক্রমণ এক ধরনের ভয়াবহ যুদ্ধ, যা রাষ্ট্রের গোপনীয়তা নষ্ট করে, আর্থিক ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা দুর্বল করে দেয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য হুমকির মুখে পড়ে।”
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রতিবছর ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস পালন করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সামাজিক উন্নয়নে প্রয়োজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর বাণিজ্যিক উদ্যোগ’।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার ওপরও জোর দেন।
“আইসিটি আজ মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তাই প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে এর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তির জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
“তাই আমাদের দরকার নিজস্ব প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল। পাশাপাশি প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে নিজেদের মত করে সফলভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রযুক্তি সহজলভ্যকরণ ও প্রযুক্তিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতেও উদ্যোগী হতে হবে।”
দেশের সর্বত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল ছড়িয়ে দিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতিও আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
“বলতে গেলে তারা চব্বিশ ঘণ্টাই আজ মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্যের আদান-প্রদান ছাড়াও মাল্টিমিডিয়ার বদৌলতে গান, ভিডিও, ফেইসবুকিং, ইন্টারনেটে চ্যাটিংসহ নানা কাজে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মোবাইলের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে।”
অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে- একথা উল্লেখ করে তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনাকে জনকল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “একবিংশ শতাব্দীর যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত সম্ভাবনাকে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা জনগণ যাতে ঘরে বসে পেতে পারে তার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। এতে জনগণের হয়রানি কমবে, সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনলাইন রচনা প্রতিযোগিতার নয় বিজয়ীর মধ্যে পুরস্কার এবং সনদ বিতরণও করেন আবদুল হামিদ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী