বাজেটের ‘লুটপাট’ বন্ধে মজুরদের প্রাধান্য চান সেলিম

বাজেটে ক্ষেতমজুর ও দিনমজুরদের সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ থাকে তার ৭০ শতাংশ লুটপাট হচ্ছে অভিযোগ করে তা ঠেকাতে বণ্টন ও ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2016, 02:58 PM
Updated : 6 May 2016, 03:38 PM

শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “ক্ষেতমজুর ও দিনমজুরদের সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ থাকে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে বাজেট থাকে তাও যাদের জন্য বাজেট তাদের কাছে পৌঁছায় না।

“দেখা যায় ১০০ টাকা বাজেট হলে তার ৭০ টাকা চলে যায় আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের হাতে। এজন্য যাদের উপকারে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা বণ্টন ও ব্যবস্থাপনায় তাদের প্রাধান্য দিতে হবে।”

পল্টনের মুক্তি ভবনে ক্ষেতমজুর সমিতি আয়োজিত ‘গ্রামীণ মজুরদের সামাজিক নিরাপত্তা: আগামী বাজেট’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে তৃণমূলে বাজেটের অর্থ ঠিকমতো ব্যয় হচ্ছে কি না- তা তদারক করতে সমিতির নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।

সভায় বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষেতমজুর-দিনমজুরদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদগুলো ক্ষেতমজুর-দিনমজুরদের নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে।”

ক্ষেতমজুর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সেলিম আরও বলেন, “বাজেট কোনো অরাজনৈতিক বা শ্রেণিচরিত্রহীন ব্যাপার নয়। এর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দর্শন আছে। আমাদের এখানে পুঁজিবাদী দর্শন দ্বারা বাজেট প্রণীত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

“বাজেটের সুফল মানুষের কাছে না যাওয়ার পেছনে এই সমাজ-অর্থনৈতিক দর্শনই দায়ী। তাই বাজেটের অর্থ ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কি না- সেটা জানা ও তদারকির পাশাপাশি এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন পরিবর্তনেও কাজ করতে হবে।”

সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।

দেশের বেশিরভাগ মানুষ ক্ষেতমজুরসহ বিভিন্ন পেশার দরিদ্র মানুষ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসব মানুষের জন্য সরকার ২৩টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৬০টি কর্মসূচি সুরক্ষা জালের অধীনে কাজ করছে। সরকার এ খাতে ৬ থেকে ৮ কোটি লোকের জন্য ১৬ হাজার থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, যা অত্যন্ত কম।

সরকারের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বরাদ্দ ব্যয়ের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ব্যাপক অভাব রয়েছে অভিযোগ করে অধ্যাপক আকাশ বলেন, “গ্রামীণ শ্রমিকদের পেনশন বা এ জাতীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, দুঃস্থ মাতা ভাতা- যাও অপ্রতুল আছে- তা মাসিক হারে মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা বা দৈনিক ১০ থেকে ১৩ টাকা।”

গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দের ২৫-৫০ শতাংশ লুটপাট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের পর দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না এবং মানুষ অনাহারে থাকবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও বিদেশে গিয়ে সেই লক্ষ্যমাত্রায় স্বাক্ষর করেছেন।

“আন্তর্জাতিক এই প্রতিশ্রুতি দেশে এসে ভুলে গেলে চলবে না। দারিদ্র্য ও খাদ্যাভাব দূর করা হয়তো একবছরে সম্ভব হবে না। তাহলে পাঁচ বছরের একটা পরিকল্পনা তো করা যেতে পারে।”

১০০ দিনের কর্মসংস্থানের যে কার্যক্রম সরকারের আছে তা সুচারুরূপে বাস্তবায়ন ও এর পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “একটি বিশাল সংখ্যার ক্ষেতমজুর সবসময় কাজ পান না। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।

“এজন্য তাদের পরিবারের সমৃদ্ধি ও উত্তরণের পরিকল্পনা নিয়ে বাজেট করা দরকার। সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।” 

সঞ্চয় ও কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ায় ক্ষেতমজুর পরিবারের একজনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেই পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যেতে পারে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নিঃস্ব হওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলায় তাদের স্বাস্থ্যবীমার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।”

ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি সোহেল আহমদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক সভাপতি শামছুজ্জামান সেলিম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা বক্তব্য দেন।