রেমিটেন্স কমছেই

অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় কমেছে, যার মূলে বিদেশি মুদ্রার দরপতনকে কারণ হিসাবে দেখছেন কেউ কেউ।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 03:36 PM
Updated : 4 May 2016, 03:36 PM

অবশ্য অর্থমন্ত্রীর আশা, জনশক্তি রপ্তানি বাড়লে এই স্থবিরতা কেটে যাবে।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এক হাজার ২২৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ কম।

জনশক্তি রপ্তানিতে ‘স্থবিরতা’র কারণে রেমিটেন্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি ছিল বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

২৭ এপ্রিল জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন তাতে মুহিত বলেন, “বিগত অর্থবছরের মার্চ হতে চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রবাস নিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা ছিল বিধায় প্রবাস আয় প্রবাহে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কাঙ্ক্ষিত গতিশীলতা আসেনি।

“তবে সম্প্রতি প্রবাস নিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসে নিয়োগ পেয়েছেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৬৪২ জন কর্মী। অর্থাৎ এই সময়ে প্রবাস নিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ।

“তাই আমার বিশ্বাস প্রবাস আয় প্রবাহের বর্তমান স্থবিরতা অচিরেই কেটে যাবে।”

তবে অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত মনে করেন, মার্কিন মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ইউরো, সিঙ্গাপুর ডলার, মালয়েশিয়ান রিংগিতসহ অন্যান্য মুদ্রার দরপতনের কারণে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউরোপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেসব দেশের মুদ্রার বেশ খানিকটা অবমূল্যায়ন হয়েছে।

“সেই অবমূল্যায়নের ফলে সে সব দেশে আবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে কম অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এটাই রেমিটেন্স কমার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এক হাজার ২২৪ কোটি ৭৪  লাখ (১২.২৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই নয় মাসে এসেছিল এক হাজার ২৫৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ১১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।

মার্চ মাসে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩২ মিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসে। অগাস্টে আসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৩৫ কোটি ডলার আসে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আসে যথাক্রমে ১১০ কোটি, ১১৪ কোটি ২৫ লাখ এবং ১৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।

ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।

রিজার্ভ ২৯.২২ বিলিয়ন ডলার

রেমিটেন্স কমলেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) বাড়ছে।

বুধবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯২২ কোটি (২৯.২২ বিলিয়ন) ডলার।

এই সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ৯০ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন রিজার্ভ কমে আসবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি আয় করেছে।

রেমিটেন্স প্রসঙ্গে মুহিত আরও বলেন, প্রবাস আয় লেনদেন ভারসাম্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে যেমন বহিঃখাতকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখে তেমনি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে