বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘স্টিচেস টু রিচেস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে চাহিদা মতো সরবরাহ ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এ গবেষণা করে। সোমবার বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি এম সিদ্দিকুর রহমান, ডিসিসিই প্রেসিডেন্ট এম আসিফ ইব্রাহিম ও বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধন অর্থনীতিবিদ গ্ল্যাডিজ লোপেজ অ্যাসিভিডো।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “শ্রমিকের কম মজুরি ২ থেকে ৩ বছরের বেশি সুবিধা দেবে না। ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে টিকতে হলে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শ্রমিকের অদক্ষতা দূর করতে সরকারি-বেসরকারি দুই পক্ষকেই কাজ করতে হবে। সরকার পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।”
বাংলাদেশে কী পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন- সে তথ্য সরকারের কাছে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে বিদেশিরা অনেক বেশি বেতনে পোশাক খাতে চাকরি করছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন করে শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে।”
এতে বলা হয়, চীনের পরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্য সবোর্চ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এশিয়ায় চীন একক হিসাবে ৪১ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। এর পরের অবস্থান বাংলাদেশর ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ভারত সাড়ে ৩ শতাংশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা রপ্তানি করছে ১ দশমিক ২ শতাংশ করে এবং অন্যরা করছে ৪৬.৭ শতাংশ। এ হিসাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের সামান্য বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে। ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো এখানে ‘নন-কস্ট’ ফ্যাক্টরগুলোর উন্নতি ঘটাতে হবে। সফলভাবে এ খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে ও অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। স্থানীয় কোম্পানির অধীনে এই শিল্প। কিন্তু সরাসরি বিদেশি বিনিযোগ (এফডিআই) কেন্দ্রীয়ভাবে এই শিল্পে ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর ২ মিলিয়ন মানুষ শ্রম বাজারে প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা খুবই কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
ইতোমধ্যে নারী শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে যুক্ত। নারীর ক্ষমতায়নে পোশাকের দাম বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু চেইন’ এবং ‘বেটার কর্মসংস্থান’ তৈরিতে বেশ কিছু বাধা রয়েছে- এগুলো হচ্ছে রপ্তানি বাধা, ‘সামাজিক স্টান্ডার্ড’ ইত্যাদি।
গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর বলেন, চীনের মজুরি বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে কম দামের পণ্য উৎপাদন অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হতে পারে। তখন বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে।
কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, চীনের সেসব শিল্প স্থানান্তর হয়েছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিয়েতনাম ও ক্যাম্পোডিয়া লাভবান হয়েছে। একইসঙ্গে ভিয়েতনাম মার্কিন বাজারে শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে। যেখানে বাংলাদেশকে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়।
এই বৈষম্য বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য হুমকি বলে মনে করেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চীন বিশ্বে পোশাক রপ্তানি করছে ৪০ শতাংশ আর বাংলাদেশ মাত্র ৬ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এর মধ্যে একটা বড় গ্যাপ রয়েছে। চীনে অন্তত ১০ শতাংশ শ্রমের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গত দশ বছরে ৩ বার শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। বাজার ও পণ্য বহুমূখী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিআইডিএস মহাপরিচালক মুর্শিদ বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার এবং বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরাপত্তা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।