সঞ্চয়পত্র: নয় মাসে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৫%

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সুদ পরিশোধও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 05:28 PM
Updated : 28 April 2016, 05:34 PM

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে ৯ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করেছিল সরকার।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সুদ বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বুধবার জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের ‘বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তাতে বলেন, “বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য সঞ্চয় উপকরণসমূহের চেয়ে তুলনামূলক আকর্ষণীয় সুদের হার সঞ্চয়পত্রের বিক্রয় বাড়াচ্ছে। যা সরকারের সুদ-ব্যয় বাড়াচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্র বিক্রি সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এর বিক্রিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে।

একক মাসের হিসাবে মার্চ মাসে ৫ হাজার ১২১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক অতীতের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি।

নিট বিক্রির হিসাবেও হয়েছে রেকর্ড। মার্চ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৮ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।

বেড়েছে নিট বিক্রির পরিমাণও। জুলাই-মার্চ সময়ে ২৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা।

এই নয় মাসে সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ১৫ হাজার কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করেছে সরকার, গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।

বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার নয় মাসেই তার চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি নিয়ে ফেলেছে।

সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে না; উল্টো বাড়ছে।

আর এর ফলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের অন্য সব পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। ব্যাংকে টাকা রাখলে ৭/৮ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। শেয়ার বাজারের অবস্থা তো দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।

“তাই সুদ হার কমানোর পরও ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঝুঁকছে মানুষ।”

নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মোট পরিমাণ থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের পরিমাণ বাদ দেওয়ার পর যেটি অবশিষ্ট থাকে সেটাকে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রি বলা হয়। নগদায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সুদসহ আসল পরিশোধ করা হয়।

সুদ-আসল পরিশোধের পর যে নিট অর্থ জমা থাকে সেটাকেই সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বা ধার বলে হিসাব করা হয়। আর এজন্য সরকারকে সুদ গুণতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এখন আর কেউ আসল তুলে নিচ্ছেন না; পুনঃবিনিয়োগ করছেন।”

প্রতি মাসে যেটা ‘শোধ’ করা হচ্ছে সেটা আসলে সুদ বাবদই করা হচ্ছে।”

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকার ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল। বছর শেষে তা ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

সর্বশেষ মার্চ মাসে মোট ৫ হাজার ১২১ কোটি ৪২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।

এ হিসাবে মার্চ মাসে নিট বিক্রির হচ্ছে ৩ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

তার আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়; সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল এক হাজার ৬৮৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

জানুয়ারি মাসে মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় এক হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। অগাস্টে তা বেড়ে ২ হাজার ৬৯১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৫৪ কোটি, ২ হাজার ৩৫৩ কোটি এবং ২ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।

অবশ্য ডিসেম্বরে তা কমে এক হাজার ৯৮০ কোটি টাকায় নেমে আসে।

বিক্রি অস্বাভিাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই ঋণের বোঝা কমাতে গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়।

মে মাসের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি মাসে এক হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পেতেন একজন গ্রাহক। সুদের হার কমায় এখন পাচ্ছেন ৯১২ টাকা।