এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে হালনাগাদ জরিপে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্বলন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৬ সালের এই জরিপ প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার রাজধানীর আইডিবি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন তুলে ধরে এসকাপের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা ড. শুভজিৎ ব্যানার্জি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে উন্নত বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চললেও রপ্তানি ও কৃষি খাতের উন্নতির কারণে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।
“বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রধানত অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আসবে, নতুন ভোক্তা সৃষ্টি হবে। অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের জন্যই আসলে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ ভাগ ধরা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অন্য সংস্থাগুলোর চেয়ে ইউএনএসকাপ ‘বেশি ইতিবাচক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিশ্ব বাজার ও অভ্যন্তরীণ বাজার যদি অনিশ্চয়তার মুখে না পড়ে তাহলে পূর্বাভাস শেষ পর্যন্ত আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে।”
প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা বজায় রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উপর জোর দেন এসকাপের এই গবেষক।
তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছরে যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। মূলত অবকাঠামো উন্নয়নের অভাবে দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জরিপ ২০১৬ প্রতিবেদন প্রকাশের এই অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ডি ওয়াটকিন্স উপস্থিত ছিলেন।
এসকাপের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা শুভজিৎ বলেন, “প্রবৃদ্ধির অর্থ গরিবের হাতে যেতে পারছে না। তাই বৈষম্য বাড়ছে।”
দারিদ্র্য বিমোচনের কাঙ্ক্ষিত হার অর্জন না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবিষয়ে সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জাতিসংঘ ও সরকারের মধ্যে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনে তারতম্য নিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, “এগুলো সবই প্রাক্কলন। একেক জন একেক ধরনের সূচক ব্যবহার করেন। আবার একেক জন্য একেক ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে করেন; কেউ তিন মাসের আবার কেউ ছয় মাসের, কেউ অন্য কোনো দেশের সাথে তুলনামূলক তথ্য দিয়ে প্রাক্কলন করে।
“তাই ৬ দশমিক ৮ ভাগের সঙ্গে ৭ দশমিক ০৫ এর তুলনা করে আমরা বলব, একটা বেশি একটা কম- এটা তুলনীয় না। কারণ তথ্য ভিত্তি ভিন্ন এবং যে সমস্ত বিশ্লেষণী কাঠামো ব্যবহার করা হয় সেগুলোও ভিন্ন।”
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ হবে বলে চলতি মাসের শুরুর দিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন; বাজেটেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল।
তবে বিশ্ব ব্যাংকের ছয় মাসের ও এডিবির নয় মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএমএফও বলেছে, ৬ দশমিক ৩ শতাংশের কথা।