রিজার্ভ ছাড়াল ২৯ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ২৯ বিলিয়ন (২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার অতিক্রম করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2016, 04:40 PM
Updated : 25 April 2016, 04:40 PM

হ্যাকিংয়ে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনার ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই রিজার্ভ এই মাইলফলক অতিক্রম করল।

সোমবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এফ এম মোকাম্মেল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই রিজার্ভ বাড়ছে। সোমবার হিসাব করে দেখা গেছে তা ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।”

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানিতে ধীর গতির কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোকাম্মেল হক।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের গচ্ছিত ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল ভুয়া বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে।

শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ লাখ ডলার আটকানো হয়। তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া কিছু অর্থ উদ্ধার হলেও বাকিটা এখনও অনিশ্চিত। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়; পরে তা আবার ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আকুর বিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। তার আগ পর্যদন্ত  রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আকুর সদস্যভুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের বিল এক সঙ্গে দুই মাস পর পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি।

 

সে সময় আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত। আর রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না- এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেওয়া হয় তখন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে বর্তমানে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি।

এ সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

অন্যদিকে অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সার্বিক আমদানি ব্যয় ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বাড়লেও জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলার (ঋণপত্র) পরিমাণ ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে।

এই সময়ে খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি কমেছে ৩৩ শতাংশের বেশি।