‘প্রভাব খাটিয়ে’ ইউনূসকে অর্থ দিয়েছিলেন হিলারি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের প্রভাব খাটিয়ে হিলারি ক্লিনটন তার ঘনিষ্ঠ নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূসকে এক কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল জুগিয়েছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদপত্র দাবি করেছে।

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2016, 07:50 PM
Updated : 27 April 2017, 04:57 AM

ওয়াশিংটনভিত্তিক দি ডেইলি কলার রোববার তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, ক্নিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা ইউনূসকে রাষ্ট্রীয় অর্থ জোগানোর মধ্য দিয়ে হিলারি স্বার্থের সংঘাত ঘটিয়েছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসের সঙ্গে ক্লিনটন পরিবারের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ২০০৯ সালে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করা হয়।

গ্রামীণ ব্যাংককে ইউরোপের দেওয়া তহবিল সরানোর অভিযোগ উঠার প্রেক্ষাপটে বয়সসীমা অতিক্রমের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানোর পর হিলারির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছিল।

ইউনূসকে সরানোর কারণে অন্য দেশ থেকে চাপ এসেছিল বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। গত বছর হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইলেও তার এই তদ্বির চালানোর বিষয়টি প্রকাশ পায়।

অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে ইউনূস হেরে যাওয়ার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ইউনূসের শীতল সম্পর্ক চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হতে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টিঘেঁষা ডেইলি কলার এই অভিযোগ তুলল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পদ হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তার নানা প্রতিষ্ঠানকে ইউএসএআইডিসহ ১৮টি সংস্থার মাধ্যমে অনুদান, ঋণ কিংবা কাজ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে ডেইলি কলার জানিয়েছে। হিলারির প্রচার দল কিংবা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি বলেছে, ইউনূস এক লাখ থেকে তিন লাখ ডলার দান করেন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে।

ইউএসএআইডি থেকে আরও ১ কোটি ১০ লাখ ডলার ১১টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল জানিয়ে ডেইলি কলার বলেছে, “এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইউনূসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।”

ঢাকা সফরের সময় মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে হিলারি ক্লিনটন (ফাইল ছবি)

হিলারি কীভাবে সরকারি পদের সঙ্গে নিজ-সংশ্লিষ্ট ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে মিলিয়ে ফেলেছিলেন, তার উপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ডেইলি কলারের প্রতিবেদনে।

এই ধরনের আচরণ উন্নত দেশগুলোতে নিন্দাজনক হলেও সরকারি অর্থের অপব্যয় নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্তে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আসেনি বলে ডেইল কলারের ভাষ্য।

“যদি ডেইলি কলার এই তথ্যটি পেয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত এফবিআইয়েরও তা পাওয়ার কথা,” বলেন এই সংস্থাটির সাবেক সহকারী পরিচালক রবার্ট হোসকো।

তবে এই সম্পর্কে এফবিআইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া চাইলে তদন্তাধীন বিষয় বলে ডেইলি কলারকে এড়িয়ে যায় সংস্থাটি।

এদিকে ইউনূসের জন্য ক্লিনটনের এই পদক্ষেপে হিলারি স্বার্থের সংঘাত ঘটিয়েছেন দাবি করেছেন রক্ষণশীল সমর্থকদের গ্রুপ সিটিজেন্স ইউনাইটেডের নেতা ডেভিড বশিয়ে। 

রিপাবলিকান এই নেতা বলেছেন, “পররাষ্ট্র দপ্তরের  কাজ এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ডোনারদের সুবিধা দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের এই কাজটি একটি বড় উদাহরণ (স্বার্থের দ্বন্দ্বের)। ই-মেইল ফাঁসের সঙ্গে এটারও তদন্ত করতে পারে এফবিআই।”

হিলারির প্রভাবে ১৮টি অনুদান ও ঋণ ইউনূস সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ আমেরিকাকে দেওয়া হয়েছিল বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় সংক্রান্ত বিভাগের (usaspending.gov) তথ্যে দেখা যায়।

এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ইউএসএআইডির মুখপাত্র রাফায়েল কুক ডেইলি কলারকে বলেন, এই বিষয়ে সামগ্রিক তথ্য দেওয়ার মতো কেউ এই মুহূর্তে নেই। 

ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি ৬ লাখ ডলার গ্রামীণ আমেরিকাকে তহবিল হিসেবে দিয়েছিল বলে ডেইলি কলারের তথ্য। তবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই দপ্তরের মুখপাত্র।

‘স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ২০১১ সাল থেকে গ্রামীণ আমেরিকাকে ৯ লাখের বেশি ডলার অনুদান দিয়েছে।

ডেইলি কলার বলেছে, যে রাজ্যে হিলারি সিনেটর সেই নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠান চালাতে ও কর্মীদের বেতন দিতে এই অনুদান ব্যবহার হয়।