করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি তিন চেম্বারের

নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2016, 03:08 PM
Updated : 17 April 2016, 03:08 PM

ঢাকা চেম্বার এই সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকার করার প্রস্তাব করেছে। অপর দুই ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্টোপলিটন চেম্বার এবং বাংলাদেশ চেম্বার দাবি জানিয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা করার।

রোববার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে এ প্রস্তাব দেন তারা।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কর বিষয়ে আরও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ী এই তিন সংগঠনের নেতারা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ এই সীমা আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানান।

এছাড়া মহিলা করদাতা ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ টাকা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, “বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ফলে মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। এ কারণেই এ সীমা বাড়ানো প্রায়োজন।

একইসঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন হোসেন খালেদ।

এ প্রসঙ্গে তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাতের অবদান ৩০ শতাংশের বেশি। ৭৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় এই খাতের মাধ্যমে।

“সে কারণেই আমি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্যাকেজ ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।”

আয়কর আরোপের ক্ষেত্রে আয়ের প্রথম ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং এর বাইরে বাকি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন হোসেন খালেদ।

লিখিত বক্তব্যে হোসেন খালেদ নতুন বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে থেকে প্রাপ্ত অর্থের করমুক্ত আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন।

এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের করের হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করের হার সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউজের করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি।

সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা, জেলা সদরের পৌরসভায় ৪ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করারও প্রস্তাব দেন হোসেন খালেদ।

এছাড়াও তিনি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অগ্রিম আয়কর বাতিল, চেম্বার ও ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সব ধরনের আয়কে করমুক্ত ঘোষণা, ঋণ ফেরত না দেওয়া আয়ের আয়করমুক্ত সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা, শিক্ষা খাতকে কর ও মূসকের আওতামুক্ত রাখা, ট্রাভেল এজেন্টদের উৎস কর কমানোর প্রস্তাব দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

‘হালখাতা’ করবে এনবিআর

আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, বকেয়া কর আদায়ে ‘হালখাতা’র আয়োজন করবে এনবিআর।

তিনি বলেন, “সম্রাট আকবরের আমল থেকে রাজ কোষের বকেয়া অর্থ সংগ্রহে বাংলা নববর্ষে হালখাতার প্রচলন শুরু হয়। ঐতিহাসিক এই ধারা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।”

আয়কর, শুল্ক এবং ভ্যাট খাতে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য হালখাতা করা হবে বলে জানান তিনি।

“দেশের সব আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কমিশনার কার্যালয়ে এ হালখাতার আয়োজন করা হবে। করদাতারা বকেয়া কর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন।”

তবে আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে এই হালখাতার আয়োজন করা হবে কীনা- সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি নজিবুর রহমান।