ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: ৪ লেইনের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইন করতে ছয় বছরের কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ১১ বছর করার সিদ্ধান্তের পর পরিকল্পনামন্ত্রী তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রসিকতায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2016, 01:08 PM
Updated : 16 Feb 2016, 05:17 PM

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অগ্রাধিকারে থাকা এই প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

তৃতীয় দফা সংশোধনের পর এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৬২৭ কোটি টাকা নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

২০০৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর একনেক সভার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু করে ২০১২ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। এরপর দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও তা শেষ করতে না পেরে তৃতীয় এই সংশোধনী।

গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ, এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রায় এক দশকেও কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলে অসন্তোষও রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (ফাইল ছবি)

একনেক সভার পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ছয় বছরের প্রকল্প শেষ করতে কেন ১১ বছর লাগছে।

উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদও বেড়েছে।”

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। কাজ শুরু করার সময় যে ‘রেট শিডিউল’ ধরা হয়েছিল, পরে তা অনেক বেড়ে গেছে। কোনও কোথাও ‘ডাইভারশন রোড’ করতে হচ্ছে। এসব কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় মূল থেকে বাড়ছে ৭৬ শতাংশ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান।

পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইন করার প্রকল্প শেষ হওয়ার পর মহাসড়কের যেসব এলাকায় বাজার রয়েছে, সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এজন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সেতু) নির্মাণে একটি প্রকল্প তৈরির জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

নয় প্রকল্প

মঙ্গলবারের বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করাসহ মোট নয়টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যাতে ব্যয় হবে মোট ৪ হাজার ৯৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। পুরো অর্থের যোগান দেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে।

অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২২২ কোটি টাকায় রাজশাহীতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ১২টি ব্যরাক নির্মাণে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি টাকা।

১৯৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ঢাকার মালিবাগে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ১২০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ২৮৮টি আবসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প।

প্রায় ৮২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত উন্নয়ন’ প্রকল্প। ‘রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনঃসংস্কার’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টোক সড়কের ৭২তম কিলোমিটারে বানার নদীর ওপর ২৮২ দশমিক ৫৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া প্রায় ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে ‘সস্রাইল-আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়নসহ ফরিদপুর (মাইজকান্দি)-বোয়ালমারি-গোপালগঞ্জ (ভোটিয়া পাড়া) সড়কের উন্নয়ন’ প্রকল্প।