চোরাচালান নির্মূলে ব্যবস্থা নেই: মাতলুব

অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সোনা চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, চোরাচালানের মূল উৎপাটনে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2016, 01:31 PM
Updated : 14 Feb 2016, 02:08 PM

শনিবার ঢাকায় এক সেমিনারে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনটির প্রধান আবদুল মাতলুব আহমাদ সোনা চোরাচালানের তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিনই সোনা আটক হচ্ছে। কিন্তু কারা এই সোনা আনে; কাদের জন্য আনা হচ্ছে- তাদেরকে আটক করা হয় না। বরাবরই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।”

শুধু পাচার করা পণ্য নয়, কারা পাচার করছে এবং তাদের হোতাদের আটক করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আগা এবং গোড়াও ধরতে হবে। খুব জানতে ইচ্ছে করে কারা এই সোনা আনে, কাদের জন্য আনা হয়।”

‘চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি রোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান।

প্রবন্ধে তিনি তথ্য দেন, গত তিন বছরে তিন টন সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, যার মূল্য এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর আটক করা হয়েছে ১৩০ জনকে। গোয়েন্দা তৎপরতায় আরও প্রায় ৫০০ মণ সোনা চোরাচালান প্রতিরোধ করা হয়েছে। আটক করা সোনা আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “দেশে অনেকভাবে চোরাচালান হচ্ছে। বাথরুমের মধ্যে সোনা পাওয়া যাচ্ছে। পেটের ভেতর থেকে জোর করে সোনা বের করা হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে এটা দেশ ও আমাদের জন্য খুবই লজ্জার।”

দুর্নীতি করলে এনবিআর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বিমানের সিট খুলে কীভাবে এতগুলো সোনা ভরা হলো কেউ কি জানে না? সংশ্লিষ্টদের ইন্ধন ছাড়া এটি সম্ভব না।”

সীমান্তে আজ যা ধরা পড়ছে, তা গাছের একটি পাতা মাত্র মন্তব্য করে মাতলুব আহমাদ বলেন, “একটি পাতা পড়লে গাছের আরও ১০টি পাতা গজাবে। চোরাচালান বন্ধে মূল উৎপাটনে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, চোরাচালানের মাধ্যমে ‘অরগানাইজড ক্রাইম’ শক্তিশালী হচ্ছে। এ জন্য সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এনবিআর এর কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে এর আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্ডার (সীমান্ত) দিয়ে বেশকিছু পণ্য প্রবেশ করে, যেগুলো আমরা পছন্দ করি না। এমন তিনটি পণ্য হল- সোনা, কোকেন ও টাকা।

“এ ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢোকে। এসব চোরাচালানের মাধ্যমে সন্ত্রাস অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে।

“সে জন্য আমরা বহুদিন ধরে বর্ডারলেস (সীমান্তহীন) দেশের কথা বলে আসছি। এটা আমাদের স্বপ্নও ছিল। কিন্তু বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে যত দিন যাচ্ছে সেই আশা তত দূরে সরে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “মুক্তবাজারের কথা চিন্তা করে আমরা শুল্ক অনেক কমিয়ে দিয়েছি। এক সময় রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সব থেকে বেশি ছিল।

“এখন রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সবচেয়ে কম। তবে এখন কিছু শুল্ক রাখা হয়েছে। সন্ত্রাস বা অপরাধ আটকাতেই আমাদের এ ব্যবস্থা (শুল্ক আরোপ) করতে হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতায় যাতে হাত না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আইনগুলো সংস্কার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।”

ভৌগলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশ চোরাচালানের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- মন্তব্য করে সাবেক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, “বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বৈধ-অবৈধ একটি ব্যবসা রয়েছ- তা হলো সীমান্ত দিয়ে গরুর ব্যবসা। এই ব্যবসায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “চোরাচালান, সন্ত্রাসী ও সংগঠিত অপরাধচক্র- এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। আমরা দেখছি, অস্ত্রের চোরাচালান বন্দরের বাইরে দিয়ে হচ্ছে। কিন্তু এর ঝুঁকি দেশের ওপর পড়ছে।”

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, “চোরাচালান ও জঙ্গিবাদ দেশের জন্য হুমকি। সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের জন্য চোরাচালানকে ব্যবহার করা হচ্ছে।”