মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ কর্মী পাঠাতে চুক্তির খসড়া অনুমোদন

আগামী তিন বছরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১৫ লাখ কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছে সরকার। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 08:04 AM
Updated : 8 Feb 2016, 02:25 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, দুই দেশের সম্মতিতে আগামী এক মাসের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক সই হবে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগের বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) এবং জিটুজি (গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট) পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় এবার সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে।  

“বাংলাদেশের বড় অর্জন হলো সোর্স কান্ট্রি (যেসব দেশে থেকে কর্মী নেবে) হিসেবে বাংলাদেশকে মালয়েশিয়া তালিকাভুক্ত করেছে। এর ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণ খাতে কর্মী পাঠানো যাবে। আগে এটা প্ল্যান্টেশনে সীমাবদ্ধ ছিল।”

এই চুক্তির আওতায় কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে মাথাপিছু ৩৪ থেকে ৩৭ হাজার টাকা খরচ হবে এবং এই টাকা নিয়োগকর্তাই বহন করবে বলে জানান তিনি।

নতুন সমঝোতা স্মারক কার্যকর হলে ২০১২ সালে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক ও ২০১৪ সালে স্বাক্ষরিত প্রটোকল বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে জি টু জি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার  ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিল।

কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। সে সময় প্রতি ছয় মাসে ৫০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক হলেও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসেবে গত তিন বছরে পাঠানো হয়েছে মাত্র সাত হাজার শ্রমিক।

এরপর জিটুজি পদ্ধতি সংস্কার করে এতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। একেই বলা হচ্ছে জিটুজি প্লাস।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) কর্মী পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে আগ্রহীদের যে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে, সেখান থেকেই বাছাই করে বিটুবি-এর মাধ্যমে শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া।

প্রত্যেক শ্রমিককে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, এরপর তিনি আরও একবছর কাজ করার সুযোগ পাবেন।

এই প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে স্বচ্ছতার জন্য কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগকর্তার সক্ষমতা ও চাহিদা যাচাই করে চাকরির সব সুবিধা নিশ্চিত করবে। তাতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।

নতুন পদ্ধতিতে কর্মীদের বেতন কত হবে তা না জানালেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কর্মীদের বেতন সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করা হবে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে ঢাকায় মালয়েশিয়া হাই কমিশন থেকে সত্যায়িত হতে হবে।

জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মহিলা কর্মী নেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, নিয়োগকর্তাই নিরাপত্তা জামানত, বায়োমেডিকেল ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য বিনিয়োগ, ক্ষতিপূরণ বীমাসহ সব কিছু নির্বাহ করবে।

“মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগকর্তার কর্মী চাহিদা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কোটা নির্ধারণ করবে। নিয়োগকর্তারা প্রাপ্ত কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবে।”

মালয়েশিয়া ওই প্রকৃত কোটার তথ্য অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিএমইটির পোর্টালে পাঠাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আর বাংলাদেশ সরকার যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের অনলাইন সিস্টেমে পাঠাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই তালিকা থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন করা হবে।”

বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহ, কর্মীদের বায়োমেডিকেল, নিরাপত্তা যাচাই, চুক্তি সম্পাদন, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রশিক্ষণ ও বহির্গমন কাজে সহায়তা করবে বলে জানান শফিউল আলম।

তিনি বলেন, “রিক্রুটিং এজেন্সি আগের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না হওয়ায় যথাযথ কাজ হয়নি।বায়রা ডাটা বেইজ থেকে কর্মী সংগ্রহ করবে।এজন্য তারা কিছু ফি পাবে। আশা করছি এবারের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ হবে।”

এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটিকে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।