ব্যাংকের অর্থে বড় হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের তহবিল

দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যকারিতা নিয়ে সরকার খুব একটা আশাবাদী না হলেও ব্যাংক খাত থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) ঋণ নেওয়ার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 04:32 AM
Updated : 26 Nov 2015, 04:32 AM

ক্ষুদ্রঋণ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের লাইসেন্স নিয়ে যারা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের মোট তহবিলের ১৬ দশমিক ৪৭ ভাগই এসেছে ব্যাংক ঋণ থেকে।

এমআরএর কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তাদের তহিবল বাড়ানোর প্রয়োজনেই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়েছে।

এমআরএর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত কয়েকবছরে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে দাতাদের বিনিয়োগ কমেছে। কমেছে পিকেএসএফের অর্থায়নও। এ কারণেও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন তারা।

তাছাড়া সময়মত অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে বলে ব্যাংকগুলোও ক্ষুদ্র ঋণের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ দেওয়া নিরাপদ মনে করে।

এমআরএ’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুন শেষে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৬৭৬টি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের মোট তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

২০১৩ সালের একই সময়ে ক্ষুদ্র ঋণ খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ ছিল ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট তহবিলের ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এর আগের বছরের জুন শেষে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট তহবিলের ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। আর ২০১১ সালের জুন শেষে ছিল ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ, যা তখনকার মোট তহবিলের ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।  

এমআরএ পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের চাহিদা অনেক। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তাতে যে পরিমাণ তহবিল দরকার, তা তাদের নেই। এজন্য ব্যাংকগুলো যাতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করে সেজন্য এমআরএর পক্ষ থেকে কর্মশালা করেছি। ব্যাংকের অর্থায়ন সে কারণেই বাড়ছে।”

ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্সের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক এম এ বাকী খলিলী বলেন, “ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া নিরাপদ। কারণ তারা সময়মত ঋণ ফেরত দেয়, অর্থাৎ ঝুঁকি কম। ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংক এখাতে ঋণ বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক।

“আবার ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের চাহিদাও বাড়ছে। কারণ এখন ১০ লাখ টাকাও ঋণ দিতে পারছে প্রতিষ্ঠানগুলো।”

ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়াকে ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী।

তিনি বলেন,“ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংকগুলো আগ্রহী, সেরকম চাহিদা নেই। ফলে ব্যাংক কম ঝুঁকিতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করতে পারে।”

“এটা একদিক থেকে ভালো। কারণ ব্যাংক যাকে অর্থায়ন করে না, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান তাকে অর্থায়ন করে। এতে দেশের উন্নয়ন হবে,” বলেন বিআইডিএসের সাবেক এই মহাপরিচালক।

অবশ্য সরকার মনে করছে, ক্ষুদ্র ঋণের চড়া সুদের কারণে এই ঋণগ্রহীতাদের দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না।

বুধবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুদের চাপে সঞ্চয় থাকে না বলেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থায় গ্রহীতাদের পক্ষে দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না।

এ কারণেই সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় বৃদ্ধি ও পল্লী কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণের ব্যবস্থা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।