উন্নয়নের ‘চার চ্যালেঞ্জ’

সরকারের নেওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সামনে চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ দেখছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2015, 03:17 PM
Updated : 16 Nov 2015, 03:36 PM

সেগুলো হচ্ছে- অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, মানব সম্পদের দক্ষতা বাড়ানো এবং শিশু পুষ্টিমান উন্নয়ন ও নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানো।

সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সমাপনী অনুষ্ঠান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথায় বিষয়গুলো উঠে আসে।

প্রায় ৬ বছর পর ১৫ নভেম্বর ঢাকায় বসে বিডিএফ বৈঠক। দুদিনের এ বৈঠকে ৮ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার কেন্দ্রে ছিল সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অর্থায়ন ও নীতি কৌশল নির্ধারণ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়ন সহেযোগীদের সকলেই বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা যে নতুন গুরুত্ব দিচ্ছি এটা ভালো। তবে এ খাতে আমাদের বরাদ্দ যথেষ্ট অনুপুযুক্ত। সেটা আমি নিজেও বলেছি, বরাদ্দের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগামী বছর থেকে এটা পরিবর্তন হতে থাকবে।

“একইসঙ্গে তারা বলেছেন, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার এটা উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে থাকবে। সুতরাং যত কিছুই আমরা নতুনভাবে নিশ্চিত করি না কেন আমাদের এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।”

উন্নয়নের জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে মুহিত নিজেও স্বীকার করেন।

“এই ঘাটতি দুর করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জনকে বলেছি উদ্যোগ নিতে এবং কিছু কিছু সহযোগিতার আশ্বাস আমরা পেয়েছি।”

নবগঠিত এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) চেয়ারম্যানও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের কথা বলেছেন। এডিবিও বলেছে একই কথা।

“অবকাঠামো খাতে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো এশিয়াতেই ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি দুর করতে না পারলে শিল্পায়ন হবে না,” বলেন অর্থমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী বাজেটেও অবকাঠামো খাতে সরাসরি বরাদ্দ বাড়বে না। তবে পিপিপির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী মানব সম্পদের গুণগত মান বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক তৈরির উপরও গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার জন্য বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“এগুলোই আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। এগুলোকে আমরা ঠিকমতো অতিক্রম করতে পারি তাহলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সালে ৮ শতাংশ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, সেখানে আমরা পৌঁছাতে পারব।”

এটা কোনো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য বলে মনে করেন না অর্থমন্ত্রী।

“আমরা বর্তমানে ৭ শতাংশের কাছাকাছি আছি। আগামী পাঁচ বছর কাজ করলে এটা অর্জন সম্ভব। এটা বড় চ্যালেঞ্জও নয়।”

অর্থমন্ত্রী নিজে উন্নয়নের আরেকটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন এবং তা হলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ। 

“বাংলাদেশের মতো দেশে ক্ষমতা ও দায়িত্বে দারুণ রকমের বিকেন্দ্রিকরণ দরকার। দেশের ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন ঢাকা থেকে করা অসম্ভব। আমাদের এখন অন্ততপক্ষে জেলায় যেতে হবে।”

ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের ক্ষেত্রে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বিডিএফ বৈঠকে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ও সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন এই দুটো বিষয় জোরালোভাবে উঠে এসেছে।

“আমি দাতা সংস্থা ও উন্নত দেশগুলোর থেকে অর্থনেতিক সুবিধার চেয়ে বাণিজ্যিক সুবিধা বেশি আশা করছি। বিশেষ করে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি বাজার প্রবেশাধিকার।” 

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মেজবাহউদ্দিন বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এজন্য তারা বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। কর ভিত্তি বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে তারা।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় দাতারা সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগ্রহ দেখিয়েছে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও।

এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষকরে সড়ক যোগাযোগ, আইসিটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে আরও উন্নত ও সহজ করার পরামর্শ এসেছে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “করিডোর শুধু ভারতের সঙ্গে নয়, নেপাল, ভুটানসহ একটা আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ার কাজ চলছে। এবিষয়ে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিবে, ভারত তা মেনে নিবে বলে জানিয়েছে।”   

সংবাদ সম্মেলনে দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডির হেড অব মিশন জেনিনা জেরোজেলস্কি, যিনি এই সভার কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও ভিশন-২০২১কে উচ্চাভিলাষী বললেও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা ঠিক থাকলে এসব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আসিফ উজ জামানও উপস্থিত ছিলেন।