‘ছিটমহলবাসীর পাশে থাকবে ব্যাংক’

বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়নে দেশের ব্যাংক খাত সাধ্যমত চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2015, 01:38 PM
Updated : 25 Oct 2015, 01:50 PM

তিনি বলেছেন, “ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে সম্ভাবনার এক নব দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে।”

রোববার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিলুপ্ত ছিটমহল দহলা খাগড়াবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন গভর্নর।

নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সরকারি সেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয় ছিটবাসী।

৩৭ হাজার বাসিন্দাসহ নিজেদের সীমানায় ভারতের এ ধরনের ১১১টি ছিটমহল পেয়েছে বাংলাদেশ। একইভাবে ১৪ হাজার বাসিন্দাসহ ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।

বাংলাদেশের মানচিত্রে সদ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়া ছিটমহলের বাসিন্দাদের জাতীয় অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্ত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান গভর্নর।

“তাদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাংকিং পরিবার সাধ্যমত সব সময় পাশে থাকবে,” বলেন তিনি।

আতিউর রহমান বলেন, “আমরা কথায় নয়, বরং বাস্তব কাজে বিশ্বাসী। এজন্যই আগের চেয়ে আরও বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ব্যাংকিং খাত বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।”

কয়েকদিন আগে কুড়িগ্রামে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের ‘ফুলকুঁড়ি’ অভিহিত করে তাদের কল্যাণে ‘যা যা দরকার’ সব করার আশ্বাস দেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।

গভর্নর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আদর্শ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবার পথে  দ্রুত এগোচ্ছি।”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করলে অচিরেই দারিদ্র্য দূর করে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তখনই কেবল বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।”

বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ব্যাংকিং খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান গভর্নর।

১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ, বর্গাচাষীদের বিশেষ ঋণ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রবর্তন এবং কৃষি ও এসএমইসহ উৎপাদনমুখী ও পরিবেশবান্ধব খাতগুলোতে ঋণের যোগান বাড়ানোসহ নানা কার্যক্রম তুলে ধরে এগুলোকে মানবিক ব্যাংকিং ধারণার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান, রংপুর অফিসের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাসানাৎ জামান চৌধুরী জর্জ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান, নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মইনুল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা, আলতাফুর রহমান ও মখলেছার রহমান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের নানা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিনা জামানতে ঋণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। 

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে গভর্নরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপন করা বিভিন্ন ব্যাংকের স্টলে গিয়ে ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় নলকূপ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, বাইসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেন।

দুটি বিদ্যালয় ও একটি ব্যাংকের দুটি শাখার কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন তিনি।

পরে রংপুরে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম, ঋণ বিতরণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম উদ্বোধনসহ নানা কর্মসুচিতে অংশ নেন গভর্নর।