‘ঝুলে গেল’ সচিবালয় স্থানান্তর

লুই আই কানের মূল নকশাসহ উপস্থাপন না করায় রমনা থেকে সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 10:10 AM
Updated : 13 Oct 2015, 10:32 AM

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে এই বৈঠক হয়।

পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন, এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার আগে আমাদের লুই আই কানের মূল নকশা এনে দেখতে হবে। আমাদের কাছে যে অনুলিপি আছে তাতে মূল নকশার বিচ্যুতি হচ্ছে কি না দেখতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী মূল নকশা পাওয়ার পর এ প্রকল্প আবার একনেকে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, “সভায় এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন রকম সুপারিশ এসেছে। এ কারণেই লুই কানের মূল নকশা অনুসরণ করতে প্রকল্পটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।”

এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পটি আপাতত ঝুলে গেছে।”

লুই কানের নকশা মিলিয়ে দেখার পর আবার এ প্রস্তাব একনেকে তোলা হলে সে সময় চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর থাকবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “মূল নকশা না দেখে কিছু বলা যাবে না। মূল নকশায় দেখতে হবে- সেখানে একটি মাজার, নাকি আরও মাজার আছে।”

এস্তোনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন স্থপতি লুই কান ১৯৬২ সালে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্স ও আশেপাশের এলাকা নিয়ে যে নকশা করেছিলেন, সেটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।

জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে গতবছরও একবার ওই মূল নকশা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেজন্য স্থাপত্য অধিদপ্তর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিল।

কিন্তু মূল নকশা আনতে কত টাকা লাগবে সেই হিসেব করতেই এক বছরের বেশি সময় পার করে দিয়েছে সংসদ সচিবালয় ও স্থাপত্য অধিদপ্তর।

রমনায় সচিবালয় সম্প্রসারণের জায়গা না থাকায় বর্তমানে বাণিজ্য মেলার খোলা মাঠ ও সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানের কিছু জায়গা নিয়ে ৩২ একর জমির উপর নতুন জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের একটি প্রস্তাব গত ৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় তোলা হয়।

কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করায় সে সময় বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তি জানায় বলে কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত জুলাই মাসে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

এ প্রকল্পের প্রস্তাবে ৩২ একর জায়গা চারটি ব্লকে ভাগ করে জাতীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বলা হয়। এর মধ্যে দুটি বড় ব্লকে ৩২টি বড় মন্ত্রণালয় এবং দুটি ব্লকে ১৬টি ছোট মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের মূল ভবনের আয়তন হবে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩১০ বর্গমিটার। এর সঙ্গে থাকবে ৫৪ হাজার ৫০৫ বর্গমিটার এসোসিয়েটস ভবন, ৫ হাজার ৮৪৩ বর্গমিটার অডিটোরিয়াম ও হলরুম, ২৪ হাজার ৭২৯ বর্গমিটার মসজিদ আর্কেড ও সমবায় ভবন, ১ হাজার ৩৮ বর্গমিটার এন্ট্রান্স প্লাজা, ৫ হাজার ২০০ বর্গমিটার চিলার রুম, ৬৮ হাজার ২৩৪ বর্গমিটারের সড়ক এবং ১ হাজার ৭৭২ মিটার সীমানা প্রাচীর।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুই হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয় প্রকল্প প্রস্তাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ প্রকল্প নেওয়ার আগে কোনো প্রাক-মূল্যায়ন করা হয়নি। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী অফিসের জন্য কী পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হবে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়নি।

এ প্রকল্পটির জন্য ১৯৭৪ সালে ১০টি ব্লকে চারটি নয়তলা ভবনসহ অফিস ব্যাংক, অডিটোরিয়াম, মসজিদ, কার পার্কিং সম্বলিত জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড উইজডম অ্যান্ড এসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছিল।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে একটি সভা করলেও বিষয়টি আর এগোয়নি।