সচিবালয় স্থানান্তরের প্রস্তাব উঠছে একনেকে

সচিবালয় রমনা থেকে শেরে বাংলা নগরে সরিয়ে নেওয়ার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উঠতে যাচ্ছে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2015, 03:45 PM
Updated : 12 Oct 2015, 03:45 PM

মঙ্গলবার এটিসহ সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প উত্থাপিত হচ্ছে বলে বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন ও সরকারি কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পদ্মাসেতুর নিরাপত্তার জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের জন্য আবাসন নির্মাণ।

এসব প্রকল্পের ব্যয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

‘শেরে বাংলানগরের উন্মুক্ত স্থানে সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প’ আওতায় বর্তমানে বাণিজ্য মেলার খোলা মাঠ ও সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানের কিছু জায়গাসহ ৩২ একর জমির উপর নতুন জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প প্রস্তাবনায় ৩২ একর জায়গা চারটি ব্লকে ভাগ করে জাতীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব করা হবে। দুটি বড় ব্লকে ৩২টি বড় মন্ত্রণালয় এবং দুটি ব্লকে ১৬টি ছোট মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করা হবে।

প্রস্তাবিত সচিবালয়ের মূল ভবনের আয়তন হবে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩১০ বর্গমিটার। এর সঙ্গে থাকবে ৫৪ হাজার ৫০৫ বর্গমিটার এসোসিয়েটস ভবন, ৫ হাজার ৮৪৩ বর্গমিটার অডিটোরিয়াম ও হলরুম, ২৪ হাজার ৭২৯ বর্গমিটার মসজিদ আর্কেড ও সমবায় ভবন, ১ হাজার ৩৮ বর্গমিটার এন্ট্রান্স প্লাজা, ৫ হাজার ২০০ বর্গমিটার চিলার রুম, ৬৮ হাজার ২৩৪ বর্গমিটারের সড়ক এবং ১ হাজার ৭৭২ মিটার সীমানা প্রাচীর।

গত ৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য তোলা হয়।

কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করায় বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তি জানায় বলে কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, প্রকল্প নেওয়ার আগে কোনো প্রাক-মূল্যায়নও করা হয়নি। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী অফিসের জন্য কী পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) উল্লেখ নেই।

এ প্রকল্পটির জন্য ১৯৭৪ সালে ১০টি ব্লকে চারটি নয়তলা ভবনসহ অফিস ব্যাংক, অডিটোরিয়াম, মসজিদ, কার পার্কিং সম্বলিত জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড উইজডম অ্যান্ড এসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছিল।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে একটি সভা করলেও বিষয়টি আর এগোয়নি।

অন্য প্রকল্পগুলো

মঙ্গলবারের একনেক সভায় উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা আরেক প্রকল্প হচ্ছে ‘মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ’। 

জাপানের অর্থায়নে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ৪৩ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। সংযোগ সড়কে কোহেলিয়া নদীর উপর একটি ৬৪০ মিটার দীর্ঘ সেতুও থাকবে।

প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মাতারবাড়িতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএস) কর্তৃক দুই ইউনিটের মোট ১২০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হয়েছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে কয়লা উঠানোর জন্য বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণ করা হবে। ৬০০ মেঘাওয়াটের দুই ইউনিটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণছাড়ও মাতারবাড়ি থেকে আনোয়রা পর্যন্ত ৪০০ কেভি ট্রান্সমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম এলাকায় বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

এছাড়া কক্সবাজার ও মহেশখালীতে ঝুলন্ত সেতু স্থাপনসহ একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। জাপানের ভারী শিল্পের একটা অংশ ওই এলাকায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে।

মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত সংযোগ সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করছে সরকার।

সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণসহ ৩৫ দশমিক ৭১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সড়ক নির্মাণ করা হবে ১০ দশমিক ৩১ কিলোমিটার, মেরামত হবে ২০ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার এবং পুনর্বাসন হবে ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। ৬৪০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু ও ২ দুটি জেটিও নির্মাণ করা হবে।

এ প্রকল্পটিতে মোট ৬০২ কোটি ব্যয় হবে, যার ৫০৪ কোটি টাকাই নমনীয় ঋণ হিসাবে হিসেবে দেবে জাইকা। বাকি ৯৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার জোগান দেবে সরকার। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি সংযোগ সড়ক নির্মাণে জাইকার সম্মতি নিশ্চিত হয়েছে। জাইকার সঙ্গে এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি আগামী মাসে সম্পন্ন হতে পারে। জাইকার এ ঋণের সুদের হার  শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ এ ঋণ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য হবে।

সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আরেক প্রকল্প হচ্ছে ঢাকার বেইলি রোডে মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (মিনিস্টার এপার্টমেন্ট-৩) প্রকল্প’।

এ প্রকল্পের অধীনে ১৫ তলা ভবনে ২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এর প্রতিটির আয়তন হবে ৫ হাজার ৫০০ বর্গফুট।

সরকারের প্রায় ১১৪ কোটি টাকায় এ আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এ বছর শুরু হয়ে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে ঢাকার মিরপুরে ৬ নন্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১ হাজার ৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প।

সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা দুর করতেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫টি ২০ তলা ভবনের প্রতিটি দেড় হাজার বর্গফুটের ৫৩২টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে।

এ প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে ৮৫২ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।