বড় বড় প্রকল্প, অর্থ ছাড়েও বড় লক্ষ্য

বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলার মধ্যে চলতি অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকেও বিশাল অঙ্কের অর্থ ছাড়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2015, 12:40 PM
Updated : 8 Oct 2015, 01:21 PM

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৪৩৬ কোটি ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

এই লক্ষ্যমাত্রা গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ১০১ কোটি ডলার বেশি। ওই অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকে ছাড়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩৫ কোটি ডলার।

অন্যদিকে দাতাদের কাছ চলতি অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ৫৭৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সম্প্রতি তৈরি করা একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশাল অঙ্কের অর্থ ছাড়ের আশা সরকার করলেও তা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন ঋণদাতা সংস্থাগুলোর অন্যতম বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তার মতে, অর্থ ছাড় নির্ভর করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাংলাদেশে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর হওয়ায় অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রেও ভাটা পড়ে।

জাহিদ হোসেন বলেন, এবার দাতাদের কাছ থেকে ছাড় করার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা পাইপলাইনের প্রায় ২০ শতাংশ। অতীতে ১৫-১৬ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় করা গিয়েছিল।

“বৈদেশিক অর্থছাড় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গেই জড়িত। প্রকল্প সহায়তা নিয়ে চলমান বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সফলতার উপর নির্ভর করবে সরকারের এবারের টার্গেট অর্জন করতে পারবে কি না।”

এক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা ‘ভালো’ নয় মন্তব্য করে বিশ্ব ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ক্রয় কাজে নানা অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার মতো বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। 

ইআরডির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থের পাইপলাইন প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ায় কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ওই চাপ কমিয়ে আনতে এখন থেকে বেশি প্রতিশ্রুতি আদায়ের চেয়ে বেশি ছাড় করার দিকে মনোযোগী সরকার।

গত অর্থবছর সরকার দাতাদের কাছ থেকে ৬০৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি আদায় করা গেছে ৫২১ কোটি ডলারের।

দাতাদের প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও গত অর্থবছরে অর্থছাড় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়। ওই অর্থবছরে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৩০০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ছাড় হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ডলার বেশি।

ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করতে চায় সরকার; দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনে পদ্মা প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছিল যে সংস্থাটি।  

বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ১২৫ কোটি ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে এ সংস্থা থেকে অর্থছাড়ের লক্ষ্য ছিল ৯৫ কোটি ডলার, কিন্তু ছাড় হয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে অর্থছাড়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার। ম্যানিলাভিত্তিক এ সংস্থার কাছ থেকে গত বছর অর্থছাড়ের লক্ষ্য ছিল ৬১ কোটি ডলার।

এছাড়া জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে ৪৯ কোটি ডলার আদায় করতে চায় সরকার।

এবার এশিয়ার দাতাদেশগুলোর কাছ থেকে (চীন, ভারত, কোরিয়া) অর্থছাড়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এছাড়া জাতিসংঘ থেকে ১৪ কোটি ২০ লাখ, ইউরো অঞ্চল থেকে ৫৭ কোটি ৩০ লাখ এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দাতাদের কাছ থেকে ২৮ কোটি ডলার অর্থছাড়ের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে যে ৫৭৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার, তাতেও বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্কের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

সংস্থাটির কাছ থেকে প্রায় ১৬২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চায় সরকার, যা ২০১৪-১৫ সালে ছিল ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এছাড়া এডিবির কাছ থেকে এবারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ১৩৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছর ছিল ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। 

গত অর্থবছরের তুলনায় এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের মতো বড় ঋণদাতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কমেছে জাইকা, এশিয়া, ইউরোপীয় দাতাদের কাছ থেকে।

গত অর্থবছর জাইকার কাছে প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য ছিল ১১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার, এবার তা কমে হয়েছে ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এশিয়ার (চীন, ভারত, কোরিয়া) দেশগুলো থেকে গতবছরে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এবার ধরা হয়েছে মাত্র ১৭ কোটি ৬ লাখ ডলার।

ইউরো অঞ্চলের দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে কমে ৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছর থেকে ৪ কোটি ডলার কম।