খেলাপি ঋণ: অর্থ আদায়ে ভাটায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষোভ

রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2015, 06:00 PM
Updated : 4 Oct 2015, 06:00 PM

এই ব্যাংক দুটিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছ থেকে ৩১০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও তারা মাত্র ২২ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

ঋণ আদায়ের এই অবস্থায় ব্যাংক দুটোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত ঋণ আদায় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী জানিয়েছেন।  

রোববার ওই দুই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, “ব্যাংক দুটিতে বড় অংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। খেলাপি ঋণও আছে উচ্চ মাত্রায়। সরকার থেকে নিয়ে বা অন্য যে কোনো উপায়ে এই মূলধন ঘাটতি মেটানো ও খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অটোমেশন, খেলাপি ঋণ কমানোর মাধ্যমে আয় বাড়াতে বলা হয়েছে।”

এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে আদায় জোরদারের পাশাপাশি অবলোপন, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সুর চৌধুরী।

গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এই বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  ‍

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছর শেষে ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।

সে হিসেবে গত এক বছরে ব্যাংকটির ঘাটতি বেড়েছে এক হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে জুন শেষে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১০ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে গত এক বছরে ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪৯৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছর শেষে ঘাটতি ছিল ২৪৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “দুটো ব্যাংকই নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর অডিটেড ব্যালেন্স শিটে নানা অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। একারণে সামনের দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত অডিট ফার্ম দিয়ে ব্যালেন্স শিট অডিট করাতে বলা হয়েছে। এছাড়া কৃষি ঋণ বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে শুধু ফসলে ঋণ না দিয়ে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে।”

তবে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলেও বকেয়া ঋণ আদায়ে বেশ ভালো করেছে দুই ব্যাংক।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বকেয়া ঋণ আদায়ে কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ১১শ’ কোটি টাকা। ব্যাংকটি এই লক্ষ্যের বিপরীতে এক হাজার ৭০ কোটি টাকা আদায় করেছে।

আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৩৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৭৫ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ  আদায় করেছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় ৩৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।