খেলাপি ঋণ আদায় কম হওয়ায় উদ্বেগ

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংক সোনালী, রুপালী, জনতা ও অগ্রণীর খেলাপি ঋণ আদায়ের হার কম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2015, 03:05 PM
Updated : 30 Sept 2015, 03:05 PM

ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চারটি ব্যাংক নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “ঋণ যা দিচ্ছে তার চেয়ে আদায়ের পরিমাণ কম। এমনটা উদ্বেগজনক। টাকা দেওয়ার আগে থেকে সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে।”

বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও বিপরীতে আদায়ের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে আট হাজার ৬৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে চার হাজার ৫০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

২০১৫ সালে আট হাজার ২৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৮০৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যদিও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আনুপাতিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৫৯৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে তিন হাজার ১৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ৫৭৬ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তিন হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ৭৩৪ কোটি টাকা।

আর ২০১৫ সালে তিন হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হলেও জুন পর্যন্ত আদায় মাত্র ১৯৩ কোটি টাকা।      

ওই প্রতিবেদনে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ৭০৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমে গেলেও ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬১০ কোটি টাকা বেড়ে গেছে।

বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ চার হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ এই ব্যাংকেও কমে গেছে।

২০১৩ সালে চার হাজার ৬০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ৪৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে তিন হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯২ কোটি এক লাখ টাকা। ২০১৫ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা হলেও আদায় হয়েছে মাত্র ৩৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

একইভাবে রুপালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, ২০১৩ সালে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা; ২০১৪ সালে এক হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় ১৩৩ কোটি টাকা; আর ২০১৫ সালে এক হাজার ৫২৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংকের এ চিত্রে হতাশা ব্যক্ত করে কমিটির এক সদস্য বলেন, “এ বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা কম হওয়ায় ঋণ আদায় আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।”

শওকত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূইয়া, মো নুরুল ইসলাম সুজন ও আব্দুর রউফ অংশ নেন।