প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় আরও দুই ধাপ অগ্রগতি বাংলাদেশের

বিশ্বে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশকে আরও দুই ধাপ এগিয়ে এনেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2015, 12:22 PM
Updated : 1 Oct 2015, 02:23 AM

২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৪টি দেশের মধ্যে ১০৯ এ। এবার ১৪০টি দেশের মধ্যে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১০৭ এ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বুধবার বার বিশ্বব্যাপী একযোগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার মহাখালী ব্র্যাক ইন সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম, যেটি দাভোস ফোরাম নামে পরিচিত, ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে। সিপিডি বৈশ্বিক এই ফোরামের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত সময়ে চালানো জরিপের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের ৫৬ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন এই জরিপে, যাদের ব্যবসা বৈশ্বিক বাণিজ্য বা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৪ সালে ৭৭ জন ব্যবসায়ী জরিপে অংশ নিয়েছিলেন।

প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনীতি, সুশাসন ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতির কারণে বাংলাদেশের এই উন্নতি হয়েছে।

তবে এসময়ে দক্ষতা ও উৎকর্ষের সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। আর্থিক খাতের দক্ষতা, সুশাসন ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে অগ্রগতি আনার জন্য সরকারকে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

“নতুবা বাংলাদেশের অর্থনীতির যে সম্ভাবনা রয়েছে বা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার জন্য অর্থনীতিতে যে শক্তি দরকার, তা অর্জন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাবে,” বলেন মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, দুর্নীতি ও সরকারের প্রশাসনিক অদক্ষতা বাংলাদেশে বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।

এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এজন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হবে বলে তাদের ধারণা।

বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও যেসব প্রতিবন্ধকতার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-সংকীর্ণ আর্থিক সুবিধা, উচ্চ কর হার, শিক্ষিত শ্রম শক্তির অভাব, কর নীতির জটিলতা, অপরাধ ও শ্রমশক্তির দুর্বল নৈতিকতাবোধ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সূচকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, হংকং, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান ৫৫, শ্রীলংকার ৬৮, নেপালের ১০০, ভুটানের ১০৫ ও পাকিস্তানের ১২৬। ভুটান বাদে এই অঞ্চলের সব দেশের অগ্রগতি হয়েছে। 

একই অনুষ্ঠানে সিপিডি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ-২০১৫ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটি বিশ্ব প্রতিযোগিতা সূচকের জরিপের প্রশ্নের উত্তর থেকেই তৈরি করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাঠামো দুর্বলতা আগের মতোই রয়েছে। আকাশ পরিবহনে (এয়ার ট্রান্সপোর্ট) কিছুটা উন্নতি হলেও সড়ক ও নৌ পরিবহনের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নতি হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে উন্নতি হলেও তা এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ। ব্যবসায়ীরা এটাকে বাস্তবায়ন পর্যায়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকগুলোর দক্ষতা কমে আরও খারাপ পর্যায়ে গেছে বলেও তাদের মত। তবে বিদেশ থেকে ঋণ পাওয়ায় ব্যবসা করা সহজ হচ্ছে বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিতে পুলিশের সেবায় উন্নতি হয়েছে। তবে তা এখনও নিম্নমানের।

এছাড়া সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিও কমেছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে অপরাধ ও সহিংসতা বিশেষ করে জোটবদ্ধ সহিংসতা ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে।

সুশাসনে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ। ঘুষ লেনদেনের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা জাতীয় সংসদ যথেষ্ট মাত্রায় কার্যকর নয় বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া ৬৮ ভাগ ব্যবসায়ী।

৫৪ ভাগ ব্যবসায়ী মনে করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবনমন হয়েছে। যেকারণে সুশাসন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি ও বিনিয়োগজনিত পরিবেশের অভাবে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

গবেষক মোয়াজ্জেম বলেন, “প্রয়োজনীয় সুবিধার সঙ্কট, দুর্নীতি, অদক্ষতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি শেষ-চতুর্থাংশে বা লোয়েস্ট কোয়ার্টার্সে আটকে আছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারকে এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।”

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসূফ, তৌফিক ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। স্কাইপে অনুষ্ঠানে যোগ দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।