মঙ্গলবার দিল্লিতে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক কনক্লেভে বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যদি কোনো বাধা ছাড়াই আঞ্চলিক বাজার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিদ্যুতের মতো খাতগুলোতে প্রবেশ করতে পারে তাহলেই কেবল তার উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।”
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’র মাধ্যমে এক্ষেত্রে একটি শুভ সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে ভ্রমণের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এটা একটা শুভ সূচনা। তবে আমরা মনে করি আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে এই মানসিকতা আনা দরকার।”
এক দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন নিয়ে (#OneSouthAsia) দিল্লিতে সোমবার শুরু হয়েছে তিন দিনের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক কনক্লেভ (#saec15)।
সম্মেলনে বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘কিছু প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি হওয়া নিয়ে অসন্তোষের সুর ছিল তোফায়েলের কণ্ঠে।
“শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে আমাদের পণ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত করায় আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা আবারও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি এবং কিছু ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে। উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ করে ভারতে পাট রপ্তানিতে আমরা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি। দ্রুতই এসব সমস্যা দূর হওয়া উচিত।”
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিকতাবাদে ‘আন্তরিকভাবে’ বিশ্বাসী বলেই সার্ক গঠনে উদ্যোগ নিয়েছে।
“আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। কারণ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের অর্থনীতি ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। আমরা সেখান থেকে অনেক দূর এগিয়েছি। তবে কেবল আঞ্চলিক বাজার ও এই অঞ্চলে যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার পেলেই আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ অর্জন করতে পারি।”
তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, এখন তা প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে।
২০২১ সাল নাগাদ শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার কোটি ডলার আয় করতে চায় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের রেমিটেন্স এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
“তবে কেবল আঞ্চলিক বাজার ও বিদ্যুতের মতো খাতে প্রবেশাধিকার পেলেই আমাদের অগ্রগতি টেকসই হবে এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে।”
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশের ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছেন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির উন্নতি হবে না।
“এই অঞ্চলে আমাদের এখনও বড় সংখ্যায় দরিদ্র মানুষ রয়েছে। দরিদ্রবান্ধব না হলে কোনো প্রবৃদ্ধিই টেকসই হবে না।
“যেমন, শ্রমঘন শিল্প ও কৃষিতে বিশেষ মনোযোগ দরকার। দরিদ্র মানুষ বিশেষত, একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান যাতে সৃষ্টি হয়, সেটাই আমাদের উন্নয়ন-লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।”
উৎপাদন ও সেবা খাতের দিকে নজর দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “অতীতে আমরা কৃষিতে গুরুত্ব দিতাম এবং সম্ভবত সেখানে গুরুত্ব দিতে বাধ্য থাকতাম। কিন্তু কৃষির প্রবৃদ্ধির নির্দিষ্ট সীমা আছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে এটা সবচেয়ে বেশি অসহায়।
“আমাদের সাবধানতার সঙ্গে কৃষি থেকে শিল্প ও সেবা খাতে মনোযোগ ঘোরাতে হবে। এটা নতুন বিশ্বের চাওয়া- এতে সাড়া না দিলে আমরা যে মাত্রায় সমৃদ্ধি চাই, তা অর্জন করতে পারব না।”