কেবল কাঁচামরিচ নয়, প্রায় সব শাক-সবজির মূল্যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে শুক্রবারের বাজারে; ৭০ টাকার নিচে সবজি খুঁজে পাওয়া কঠিন।
টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় শাক-সবজির দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা আর দেশি কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অবশ্য কোন কোন বাজারে ২৮০ টাকা কেজি বা আড়াইশ গ্রাম ৭৫ টাকাও হেঁকেছেন কোন কোন বিক্রেতা।
মহাখালী কাঁচাবাজারে এই দাম চান সবজি বিক্রেতা মহসিন।
তার মরিচের দাম বেশি কেন জানতে চাওয়া হলে সরল স্বীকারোক্তি, “মরিচ ভালো, দামও বেশি। আমরাও বেশি দামে কিনেছি। অন্যদের মরিচে এক পোয়াতে ৫০ গ্রামতো ব্যবহার করতে পারবেন না; কচি বা নষ্ট পাবেন। আমার মরিচ তো সেরকম না।”
তিনি বলেন, “সাদাটা ইন্ডিয়ান মরিচ। এইটার দাম কেজি ১৬০ টাকা। আর এক পোয়া নিলে ৪৫ টাকা। আর এই দেশি মরিচের দাম ২২০ টাকা কেজি। আর এক পোয়া নিলে ৬০ টাকা।”
মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নূর মিয়া জানান, “বন্যার কারণে দেশি মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে খুব অল্পই দেশি মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান মরিচ আছে বলেই এই দামে পাওয়া যাচ্ছে। তা না হলে আরও বেশি দাম হতো।”
তার সঙ্গে আলাপকালেই শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একজন ক্রেতা।
ওই ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে বাজার করে আসছি। এরকম দাম কখনও দেখিনি। ১৯৯৮ সালে বন্যার সময় দাম বেড়েছিল, তাও এত না। এবার কীসের বন্যা হয়েছে; কিছুই হয়নি। তারপরও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে।”
এ পরিস্থিতির জন্য তিনি সরকারের তদারকি ব্যবস্থাকে দায়ী করেন।
এছাড়া করলা ৭০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, ঝিংগা ৫০ টাকা, মুখিকচু ৪০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কচুর লতি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংগা ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ১১ নম্বরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন মুকুল আহমেদ। জানালেন, কারওয়ান বাজার ও শাহ আলী মাজারের সামনের বাজার থেকে তারা সবজি কিনে আনেন। তবে ইদানিং প্রায় সব সবজির দামই পাল্লায় বেড়েছে অন্তত ৫০ টাকা। বিক্রির ক্ষেত্রে তাই একটু বেশি দাম রাখতে হয়।
কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। সরবরাহ কমে গেছে। আগে যেখানে দশ ট্রাক মাল আসতো, এখন সেখানে ছয় থেকে সর্বোচ্চ সাত ট্রাক আসছে। তাও সবদিন এরকম আসছে না।
“যে কারণে দাম একটু বেশি। তবে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি, ভারত থেকে মাল আসছে।”
গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে রসুন, ব্রয়লার মুরগি ও চিনির দাম বেড়েছে। কমেছে পেঁয়াজ ও ডিমের দাম।
শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে দেশি রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে দেশি রসুন সর্বোচ্চ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ১০০ টাকা কেজিতেও আমদানি করা রসুন পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে এইসব পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেশি ছিল।
ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা দরে এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে।
কমেছে ডিমের দাম; প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১০৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ১১২ টাকা ছিল।
অন্যদিকে গত ২৫ অগাস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করার পর থেকে বাড়ছে চিনির দাম।
গত সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে পাওয়া গেলেও শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ থেকে ৪২ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনির ক্ষেত্রে এই দাম কোম্পানিভেদে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেশি।
চিনি আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের পাশাপাশি চিনির ট্যারিফ ভ্যালুও নির্ধারণ করা হয় সম্প্রতি।