বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় লিখিত বক্তব্যে গর্ভনর বলেন, “বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এবং অর্থনীতি সচল রয়েছে।
“তাই বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ বন্ধ করার এখনই সময়। এখন থেকে ঋণ পুনঃতফসিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।”
এর আগে ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায়ও গভর্নর ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল কিংবা শর্ত সাপেক্ষে ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত না নিতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের আহ্বান জানান।
তা সত্ত্বেও বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার আবেদন করে আসছিল ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদনও দেয়।
গভর্নরের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় প্রায় ৭০০ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার অনুমোদন দিয়েছে।
২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারী করে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালায় ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা ঢালাওভাবে সকলে পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় পর্যন্ত এই সুবিধায় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছিল।
এরপর ঢালাওভাবে এই সুবিধা না দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে শিথিল ডাউন পেমেন্টের শর্তে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রেও কয়েক হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়েছে।
আর এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মালিকপক্ষও লাভবান হয়েছে। কারণ এই ব্যাপক খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) কম রাখতে হয়েছে। ফলে মুনাফা বেড়েছে।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মন্দ ঋণ মন্দ পর্যায়ে রয়েছে। এই বিশেষ সুবিধায় দেওয়া খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পর পুনরায় খেলাপি হয়ে পড়ছে। যে কারণে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুন শেষে ছিল ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
ঝুঁকিমুক্ত আয়-মুনাফা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে গর্ভনর বলেন, “আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যথাযথ ঋণ নিয়মাচার মেনে গুণমানের ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক ও মনোযোগী হতে হবে।”