কিছুটা দুর্বল হয়েছে টাকা, তাতেও ‘ভালো’

আট মাসেরও বেশি সময় একই দরে স্থির থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা কিছুটা দুর্বল হয়েছে, অর্থ্যাৎ ডলার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 03:50 PM
Updated : 3 Sept 2015, 06:59 PM

টাকার মান কমার এই প্রবণতা রেমিটেন্স ও রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৭৭ টাকা ৮৩ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। তার আগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত বুধবার পর্যন্ত টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা।

দীর্ঘদিন পর টাকার বিপরীতে ডলার কেন শক্তিশালী হচ্ছে- এ প্রশ্নের উত্তরে কাজী ছাইদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব কিছুই বাজারের উপর নির্ভর করে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে, সে কারণেই এটা শক্তিশালী হচ্ছে।”

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে ‘ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়া দরকার’ বলে মনে করেন তিনি।

অর্থাৎ আগে প্রবাস থেকে পাঠানো ডলার ভাঙিয়ে যে টাকা পাওয়া যেত, এখন তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। আবার পণ্য রপ্তানি করে পাওয়া ডলারের বাংলাদেশি টাকায় মূল্যমান হবে বেশি।

টাকা শক্তিশালী থাকা অবস্থায় রপ্তানিকারকদের তুলনায় আমদানিকারকরা বেশি লাভবান হচ্ছিলেন। কারণ টাকার মূল্যে হিসেব করলে সব পণ্যের আমদানি খরচ কম পড়ছিল।

রপ্তানি বাড়াতে সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়মূল্য বেশ খানিকটা কমিয়েছে।এক বছর আগে এক ডলারের জন্য ৬ দশমিক ১৪ ইউয়ান খরচ করতে হত, এখন লাগছে ৬ দশমিক ৩৬ ইউয়ান।

ইউয়ানের এই দরপতনের পর চীন, জাপানসহ এশিয়ার শেয়ার বাজারে ধস নেমে আসে, যার রেশ এখনও কাটেনি।

বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদরা রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে টাকার মান কমানোর পরামর্শ দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি। বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ায় এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবারও ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) ডলার কিনেছে।

এ নিয়ে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ১২৯ কোটি ( ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কেনা হয়েছে ৮৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। অগাস্টে কেনা হয় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৩৪০ কোটি (৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ছাইদুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার আমরা ৭৭ টাকা ৮৩ পয়সা দরে ২০ মিলিয়ন ডলার কিনেছি। প্রায় ১৫ দিন পর ডলার কিনলাম।”

২০০৩ সালে বাংলাদেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার ঠিক করে দিত। সে দরেই ডলার লেনদেন হত। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে টাকা-ডলারের বিনিময় হারে হস্তক্ষেপ করেছে।

অগাস্টে রেমিটেন্স ১১৯ কোটি ডলার

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস অগাস্টে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক একক মাস হিসাবে গত তিন বছরের অগাস্ট মাসের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের অগাস্ট মাসে ১১৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের অগাস্টে এসেছিল ১০০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের অগাস্টে আসে ১১৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

তবে অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স কমেছে।জুলাইয়ে ১৩৯ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এসছিল ১৪৪ কোটি ডলার।

জুন-জুলাইয়ের চেয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স কমার কারণ ব্যাখ্যা করে ছাইদুর রহমান বলেন, “অগাস্ট মাস ছিল রোজার ঈদের পরের মাস। বরাবরই দুই ঈদের পরের মাসে কম রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা।”

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে দেশে বেশি রেমিটেন্স আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

রিজার্ভ ২৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু)আমদানি বিল পরিশোধের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। আকুর জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিল পরিশোধের পর তা ২৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।