চীনা প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ

চীনের অর্থ সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 03:10 PM
Updated : 2 Sept 2015, 03:10 PM

তারা বলছেন, দরপত্র আহ্বান না করায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়ম হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখ থেকে এ ধরনের অভিমত এসেছে, যার সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতেও রয়েছে।

চীন সরকারের নমনীয় ও অননমনীয় ঋণ নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠকে কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অনুসৃত গণ খাতে ক্রয় আইন (পিপিএ) এবং গণ খাতে ক্রয় নিয়মও (পিপিআর) মানা হচ্ছে না।

চীনা অর্থায়নের শর্ত অনুযায়ী বর্তমানে শুধু চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে পণ্য ও মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম অনিয়মের আশঙ্কা দেখা দেয়। তা পরিহার করার জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমিত দরপত্র আহ্বান করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা ও সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

একই সঙ্গে দরপত্রের মাধ্যমে মানসম্পন্ন পণ্য সংগ্রহেরও সুপারিশ করেন বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি চীনা এক্সিম ব্যাংক তাদের প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্যের ১৫ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশকে অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে সরকারকে চিঠি দেয়।

ওই চিঠির উত্তরে বাংলাদেশ ১৫ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধে অপারগতা জানায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের পর চীন সরকার বাংলাদেশকে এখনো কিছুই জানায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীনা অর্থায়নের ক্ষেত্রে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়। এতে প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আশঙ্কা দূর করতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ ও যথার্থতা নিরুপণের জন্য কোনো নিরপক্ষে স্বতন্ত্র সংস্থা দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করারও আহ্বান জানান কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ইআরডি সচিব মেজবাহউদ্দিনসহ বৈঠকের অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন তিনি।

বায়ার্স ক্রেডিটে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্প-মূল্যের ১৫ শতাংশ অগ্রিম প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, চলমান নিয়মে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ জোগান দিয়ে থাকে। এখন নতুন করে আরো ১৫ শতাংশ অগ্রিম দিতে হলে তা সরকারের পক্ষে দুরূহ হবে বলে আশঙ্কা করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন করে ১৫ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দিতে হলে ওই ঋণের গ্র্যান্ট ইলিমেন্ট দাঁড়াবে ১১ শতাংশ (অধিক কঠিন শর্তের ঋণ হবে)।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, গ্র্যান্ট ইলিমেন্ট ৩৫ শতাংশের নিচে হলেই তা কঠিন শর্তের ঋণ বলে বিবেচিত হবে। গ্রান্ট ইলিমেন্ট ৩৫ শতাংশের যত বেশি হবে, ওই ঋণ ততই সহজ শর্তের হবে।